রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন (Vladimir Putin) এ বছরই নয়াদিল্লি সফরে আসতে পারেন, এমন জোর জল্পনা ছড়িয়েছে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন ভারতের রাশিয়া থেকে তেল কেনা নিয়ে একের পর এক আক্রমণ শানিয়ে দিলেন এবং ৫০% শুল্ক আরোপ করে দিলেন, ঠিক তখনই পুতিনের এই সফরের খবর পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে (Vladimir Putin)।
ইউক্রেন আক্রমণের পর এটি হবে পুতিনের (Vladimir Putin) প্রথম ভারত সফর। ২০২৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত তাঁর বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধাপরাধ’-এর অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল, যার জেরে তিনি (Vladimir Putin) গত কয়েক বছরে খুব সীমিত আন্তর্জাতিক সফর করেছেন। তবে ভারত যেহেতু রোম স্ট্যাটিউটে স্বাক্ষরকারী নয়, তাই এখানে তাঁর সফরে কোনও আইনি বাধা নেই।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একাধিকবার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে শান্তি ও সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন। গত বছর দু’বার পুতিনের (Vladimir Putin) সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়েছে—প্রথমবার ২০২৪ সালের জুলাইয়ে মস্কোতে ২২তম বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনে এবং দ্বিতীয়বার ১৬তম ব্রিকস সম্মেলনে কাজানে। এর আগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ২১তম ভারত-রাশিয়া বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনে নয়াদিল্লিতে পুতিনকে (Vladimir Putin) আতিথ্য দিয়েছিলেন মোদী।
পুতিনের (Vladimir Putin) এই সফর এমন সময়ে হতে চলেছে, যখন ট্রাম্প ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছেন যে, রাশিয়ান তেল কিনে ভারত নাকি ইউক্রেনে যুদ্ধ চালানোর জন্য মস্কোর “যুদ্ধযন্ত্র”-কে জ্বালানি দিচ্ছে। যদিও গত এক দশকে কোয়াডের মতো সহযোগিতার মাধ্যমে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক অনেক ঘনিষ্ঠ হয়েছে, তবু নিউ দিল্লি এখনও মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ককে “স্থিতিশীল ও পরীক্ষিত অংশীদারিত্ব” বলেই বর্ণনা করে।
দুই দেশের সম্পর্কে ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত তৈরি হয়েছিল। তখন আমেরিকা পাকিস্তানের সমর্থনে ভারত মহাসাগরে যুদ্ধজাহাজ পাঠালেও, রাশিয়া ভারতের পাশে দাঁড়িয়ে সেই পদক্ষেপ রুখে দেয়। ভারত আজও রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনাকে জাতীয় স্বার্থ ও অর্থনৈতিক সুরক্ষার জন্য অপরিহার্য বলে দাবি করে আসছে।
২০০০ সালের অক্টোবরে পুতিনের (Vladimir Putin) ভারত সফরের সময় স্বাক্ষরিত “ভারত-রাশিয়া কৌশলগত অংশীদারিত্ব ঘোষণা”র পর থেকেই প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, বাণিজ্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, সংস্কৃতি এবং জনসংযোগের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও মজবুত হয়েছে। ভারত ও রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী-রাষ্ট্রপতির বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন এই সম্পর্কের সর্বোচ্চ স্তরের প্রাতিষ্ঠানিক সংলাপ, যার মধ্যে ইতিমধ্যেই ২১টি সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে।
বাণিজ্য ও বিনিয়োগেও রেকর্ড গড়েছে—২০২৫ সালের মধ্যে ৩০ বিলিয়ন ডলারের যে লক্ষ্য ছিল, তা আগেই ছাড়িয়ে গেছে। এখন লক্ষ্য ৫০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে যৌথ প্রকল্পের তালিকায় রয়েছে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা, টি-৯০ ট্যাঙ্ক, সু-৩০ এমকেআই, মিগ-২৯, কামভ হেলিকপ্টার, আইএনএস বিক্রমাদিত্য, একে-২০৩ রাইফেল এবং বহুল আলোচিত ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র।
ভারত-রাশিয়ার যৌথ উদ্যোগে তৈরি ব্রহ্মোস সম্প্রতি পাকিস্তান ও পিওকে-তে সন্ত্রাসবাদী অবকাঠামো ধ্বংস করতে ‘অপারেশন সিন্ধুর’-এ ব্যবহৃত হয়েছিল। চার দিনের সংঘাতে পাকিস্তানের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতেও এটি মোতায়েন হয়েছিল, যা সামরিক কৌশলে নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।