রবিবার ভোরে উত্তরাখণ্ডের (Uttarakhand) গৌরিকুণ্ড জঙ্গলে ভয়াবহ হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল সাতজনের। যাত্রীদের নিয়ে কেদারনাথ ধাম থেকে গুপ্তকাশীর উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল ‘আর্যন অ্যাভিয়েশন’-এর একটি হেলিকপ্টার। যাত্রার কিছুক্ষণের মধ্যেই, ভোর ৫টা ১৭ মিনিটে উড়ান শুরুর পর দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় হেলিকপ্টারটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে জঙ্গলে ভেঙে পড়ে।
দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ছিলেন (Uttarakhand) হেলিকপ্টারটির পাইলট রাজবীর এবং ছয়জন যাত্রী—বিক্রম রাওয়াত, বিনোদ, তৃষ্ঠি সিং, রাজকুমা, শ্রদ্ধা এবং ১০ বছরের শিশু রাশি। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, অতিরিক্ত কুয়াশা ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে দৃশ্যমানতা কমে গিয়েছিল। সেই কারণেই দুর্ঘটনাটি ঘটে বলে প্রাথমিকভাবে অনুমান।
দুর্ঘটনার খবর পাওয়া মাত্রই উদ্ধার কাজ শুরু হয় (Uttarakhand) । SDRF (স্টেট ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স)-এর টিম, কমান্ডান্ট অর্পণ যাদুবংশীর নেতৃত্বে, দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। দুর্গম বনভূমিতে উদ্ধার কাজ চালানো হয় SDRF, NDRF ও স্থানীয় পুলিশের যৌথ উদ্যোগে।
এই দুর্ঘটনা গত ছয় সপ্তাহে উত্তরাখণ্ডে (Uttarakhand) পঞ্চম হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা। ঘটনার পর চারধাম অঞ্চলের সমস্ত হেলিকপ্টার পরিষেবা সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়েছে।

উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামী গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন, “খারাপ আবহাওয়ার জন্যই আজ সকালে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। আমি প্রার্থনা করি, ঈশ্বর নিহতদের শান্তি দান করুন।” সঙ্গে সঙ্গে জরুরি বৈঠকের ডাক দেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে DGCA-র (ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন) নিয়মকানুন যথাযথভাবে মানা হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, হিমালয় অঞ্চলে উড়ান পরিচালনা করার জন্য পাইলটদের বিশেষ অভিজ্ঞতা থাকা বাধ্যতামূলক। যেসব সংস্থা এই পরিষেবা দেয়, তাদের উচিত আগে থেকেই এই বিষয়টি নিশ্চিত করা।
দেহরাদুনে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক ডাকা হয়, যেখানে মুখ্যমন্ত্রী নিজে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যসচিব, পর্যটন ও বেসামরিক বিমান পরিবহণ সচিব, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আধিকারিক, UCADA, DGCA এবং তথ্য দফতরের প্রতিনিধিরা। বিভিন্ন জেলায় নিযুক্ত আধিকারিকরাও ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন।
বৈঠকে প্রাথমিক তদন্তের রিপোর্ট পর্যালোচনা করা হয় এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত নীতিমালা আরও কড়া করার ওপর জোর দেওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে, হেলিকপ্টার পরিষেবা চালানোর জন্য একটি নতুন স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (SOP) তৈরির লক্ষ্যে একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আগে গঠিত যে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি রাজ্যে সাম্প্রতিক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনাগুলি খতিয়ে দেখছে, তারাই এই দুর্ঘটনারও তদন্ত করবে। কোথায় কী গাফিলতি হয়েছে, তার খোঁজ নিয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হবে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “উত্তরাখণ্ডে হেলিকপ্টার পরিষেবা শুধু তীর্থযাত্রা নয়, দুর্যোগ মোকাবিলা ও জরুরি পরিস্থিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। সেই কারণে এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই এখন সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার।”