বাংলা এবং অসম— দুই রাজ্যেই আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচন। কিন্তু ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় পরিমার্জন বা SIR চালু হচ্ছে শুধুমাত্র বাংলায়, অসমে নয়। এই বৈপরীত্য নিয়েই উঠেছে বড় প্রশ্ন। কেন এমন সিদ্ধান্ত নিল জাতীয় নির্বাচন কমিশন? সোমবার নয়াদিল্লির বিজ্ঞান ভবনে সাংবাদিক বৈঠকে সেই প্রশ্নের জবাব দিলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার।
বাংলা-সহ ১২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে SIR শুরু করার ঘোষণা করেছে কমিশন। কিন্তু সেই তালিকায় নাম নেই অসমের। কেন? জ্ঞানেশ কুমার স্পষ্ট করে বলেন, “অসমে নাগরিকত্ব যাচাইকরণ বা এনআরসি প্রক্রিয়া সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে এখন শেষ পর্যায়ে চলছে। সেই কারণেই সারা দেশের জন্য প্রকাশিত SIR বিজ্ঞপ্তি অসমে প্রযোজ্য হচ্ছে না।”
তবে তিনি এও জানান, “এর মানে এই নয় যে অসমে SIR হবে না। ওই রাজ্যের জন্য আলাদা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হবে।” যদিও কবে সেই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে, তা নিয়ে কিছুই বলেননি মুখ্য নির্বাচন কমিশনার।
এই ব্যাখ্যা ঘিরে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে নতুন আলোচনা। কারণ, বাংলা ও অসম— দুটি রাজ্যই সীমান্তবর্তী এবং উভয় রাজ্যেই অনুপ্রবেশ ও নাগরিকত্ব নিয়ে দীর্ঘদিনের বিতর্ক রয়েছে। একদিকে যেখানে বাংলায় SIR শুরু হচ্ছে ২৮ অক্টোবর থেকে, সেখানে অসমকে বাদ দেওয়ায় উঠছে নানা প্রশ্ন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এনআরসি এখনও অসমে সম্পূর্ণ হয়নি, তাই নির্বাচন কমিশন আপাতত কোনও সমান্তরাল যাচাই প্রক্রিয়ায় যেতে চাইছে না।
প্রসঙ্গত, শুধুমাত্র অসমের জন্যই নাগরিকত্ব আইনের ৬ নম্বর ধারাটি সংযোজিত হয়েছিল। ১৯৮৫ সালে অসম আন্দোলনের পর ভারত সরকার ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে হওয়া অসম চুক্তির ভিত্তিতেই এই ধারা যুক্ত হয়। সেই চুক্তি অনুযায়ী ১৯৭১ সালের আগে যাঁরা অসমে এসেছেন, তাঁদের নাগরিক হিসাবে গণ্য করা হয়। এনআরসি সেই নিরিখেই তৈরি হয়েছে। ফলে এই মুহূর্তে নতুন করে SIR শুরু করলে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে— এমন আশঙ্কাই কমিশনের।
নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তে এখন পরিষ্কার— যেখানে এনআরসি চলছে, সেখানে আপাতত নতুন ভোটার যাচাই নয়। অন্যদিকে, বাংলায় রাজনৈতিক উত্তাপ তুঙ্গে। তৃণমূল ইতিমধ্যেই হুঁশিয়ারি দিয়েছে, বৈধ ভোটারের নাম বাদ গেলে তারা রাস্তায় নামবে। আর ঠিক সেই সময়েই অসমে সমীক্ষা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি হয়েছে জাতীয় পর্যায়ে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, বাংলায় SIR শুরু হওয়া এবং অসমে না হওয়া— দুই সিদ্ধান্তই আসন্ন নির্বাচনের আগে প্রশাসনিকভাবে যেমন তাৎপর্যপূর্ণ, তেমন রাজনৈতিকভাবেও অত্যন্ত স্পর্শকাতর। আগামী মাসগুলোয় এই ইস্যু যে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় রাজনীতির নতুন বিতর্কের কেন্দ্র হয়ে উঠবে, তা বলাই বাহুল্য।









