শিবসেনা নেতা মিলিন্দ দেওরা (Milind Deora) বুধবার কড়া ভাষায় বিরোধী দলগুলির সমালোচনা করেছেন, যারা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফোনালাপ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। দেওরা (Milind Deora) বলেন, বিরোধীরা এখন ভারতের নিজস্ব পররাষ্ট্র মন্ত্রকের ওপর আস্থা না রেখে বিদেশি সরকারের কথায় বেশি ভরসা করছে।
সাক্ষাৎকারে মিলিন্দ দেওরা (Milind Deora) বলেন, “যদি আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রক বলে যে প্রধানমন্ত্রী মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন, তাহলে সেটা নিয়ে বেশি ব্যাখ্যা বা সন্দেহ করার কিছু নেই। বিরোধী নেতারা আমাদের মন্ত্রকের ওপর বিশ্বাস রাখা উচিত। একটা নতুন পরিবেশ তৈরি হয়েছে যেখানে বিরোধীরা নিজেদের দেশের বদলে অন্য দেশের বিদেশ মন্ত্রকের কথা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।”
দেওরা (Milind Deora) আরও বলেন, বিদেশনীতি এবং জাতীয় নিরাপত্তা কখনও রাজনীতির শিকার হওয়া উচিত নয়। এই ধরনের জাতীয় সংকটের সময়ে সব রাজনৈতিক দলকে একসঙ্গে দাঁড়াতে হবে। তিনি উদাহরণ দেন ২৬/১১ মুম্বাই হামলার সময়ের, যখন তিনি নিজে সব রাজনৈতিক দলকে অনুরোধ করেছিলেন সরকারকে সমর্থন করতে।
তিনি (Milind Deora) বলেন, “যখনই সীমান্তপারের সন্ত্রাসবাদ ঘটে—মুম্বাই বা কাশ্মীরে—সব বিরোধী দলকে সরকারকে সমর্থন করা উচিত। প্রয়োজনে পরামর্শ দিন, কিন্তু রাজনীতি করবেন না।”
জুন ১২-র বিমান দুর্ঘটনা নিয়েও মিলিন্দ দেওরা (Milind Deora) মন্তব্য করেন। সেই দুর্ঘটনায় ২৭০-র বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। তিনি বলেন, তদন্ত শেষ হওয়ার আগে কোনও পাইলট বা এয়ারলাইনের বিরুদ্ধে দোষারোপ করা ঠিক নয়। তবে তদন্তের পর যাদের দোষ প্রমাণিত হবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা দরকার।

দেওরার এই মন্তব্য এমন সময়ে এসেছে যখন প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাম্প্রতিক ফোনালাপ ঘিরে রাজনীতিতে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। ৩৫ মিনিটের এই ফোনকল ট্রাম্পের অনুরোধেই হয়েছিল। পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্র জানিয়েছেন, এই ফোনে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করে জানিয়েছেন যে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ১০ মে’র যুদ্ধবিরতি কোনও মার্কিন মধ্যস্থতার ফল নয়।
মিশ্র বলেন, মোদি ট্রাম্পকে জানিয়েছেন, ভারত নিজেই পাকিস্তানের অনুরোধে সাময়িকভাবে অভিযান বন্ধ করেছিল এবং সব আলোচনা হয়েছে দুই দেশের মিলিটারি চ্যানেলের মাধ্যমে। ফোনালাপে মোদি ট্রাম্পকে জানিয়েছেন, ৭ মে ভারত ‘অপারেশন সিন্ধুর’ মাধ্যমে একটি পরিমিত, সুনির্দিষ্ট এবং উত্তেজনা না বাড়িয়ে একটি সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছিল।
তাছাড়া, মোদি জানিয়েছেন, মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ৯ মে ভারতকে সতর্ক করেছিলেন পাকিস্তান বড় হামলার পরিকল্পনা করছে। এরপরেই ভারত পাল্টা শক্ত প্রতিক্রিয়া দেয়।
এই ফোনালাপ নিয়ে দেশে রাজনৈতিক তাপমাত্রা বাড়ছে। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ সরকারকে স্বচ্ছতার অভাবে দোষারোপ করে বলেন, বিদেশনীতি ও কূটনীতিতে ভারত একসঙ্গে তিনটি ধাক্কা খেয়েছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, প্রধানমন্ত্রী কেন এই বিষয়ে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকছেন না? কেন তিনি সংসদে এই ফোনালাপের বিষয়বস্তু প্রকাশ করছেন না?
রমেশ আরও বলেন, ভারতের পক্ষ থেকে ফোনকলের একটি সরকারি বিবৃতি প্রকাশিত হলেও, এখনও পর্যন্ত আমেরিকার পক্ষ থেকে কোনও অফিসিয়াল বিবৃতি আসেনি। তিনি মনে করিয়ে দেন, মোদি-Trump ফোনালাপের দুই দেশের ব্যাখ্যার মধ্যে বিরাট ফারাক রয়েছে, এবং সেই কারণেই প্রধানমন্ত্রীকেই প্রকাশ্যে সংসদে কথা বলতে হবে।