৭ মে ভারত ‘অপারেশন সিন্দুর’ শুরু করার পর, মোদি সরকারের পাকিস্তান-বিরোধী পদক্ষেপকে যেভাবে একজন কংগ্রেস সাংসদ (Shashi Tharoor) খোলাখুলি সমর্থন করলেন, তা নিয়ে শুরু হয়েছে জোর চর্চা। তিনি (Shashi Tharoor) কেরালার থিরুভানন্তপুরমের সাংসদ এবং প্রাক্তন কূটনীতিক শশী থারুর। বিদেশি সংবাদমাধ্যমে গিয়ে যেভাবে তিনি (Shashi Tharoor) ভারতের অবস্থান তুলে ধরেছেন, তাতে প্রশংসা কুড়িয়েছেন সকলের। কিন্তু কংগ্রেস নেতৃত্বের মধ্যে নাকি তা নিয়ে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।
সূত্রের খবর, থারুরের অবস্থান দলের লাইনের বাইরে চলে যাওয়ায়, কংগ্রেস নেতৃত্ব তাঁকে বার্তা পাঠিয়েছে— “আপনি লক্ষ্মণ রেখা পার করেছেন।” যদিও কংগ্রেসও ভারতীয় সেনার সঠিক অভিযানের প্রশংসা করেছে, কিন্তু তারা প্রশ্ন তোলে— কেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির ঘোষণা করলেন?
তিনি বলেন, “আমার মনে হয়, ওঁরা (মার্কিন প্রেসিডেন্ট) শুধু কৃতিত্ব নিতে চাইছেন। আর ভারত সরকার হয়তো ভেবেছে, ওরা যদি কৃতিত্ব নিতে চায়, নিক। আমাদের কাছে বিষয়টা ছিল, পাকিস্তানের ডিজিএমও ৩:৩৫ মিনিটে ফোন করে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেন, আর ভারত সরকার তৎক্ষণাৎ তাতে রাজি হয় কারণ আমরা দীর্ঘ যুদ্ধ চাই না।”
সরকার থারুরকে অপারেশন সিন্দুর বিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রচারের জন্য সাত সদস্যের সর্বদলীয় প্রতিনিধি দলের প্রধান হিসেবে মনোনীত করেছে। কিন্তু কংগ্রেসের প্রস্তাবিত তালিকায় তাঁর নাম ছিল না। কংগ্রেস যে চারজনের নাম পাঠায় তারা হলেন— আনন্দ শর্মা, গৌরব গগৈ, সায়েদ নাসির হুসেন এবং রাজা ব্রার।
বিজেপি এই নিয়ে কংগ্রেসকে আক্রমণ করে। বিজেপির আইটি সেল প্রধান অমিত মালব্য বলেন, “কংগ্রেস যাদের আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতকে প্রতিনিধিত্ব করতে পাঠাতে চায়, তাদের পছন্দ শুধুই অদ্ভুত নয়, গভীরভাবে প্রশ্নবিদ্ধ।” শশী থারুর অতীতে বহুবার প্রধানমন্ত্রী মোদির প্রশংসা করেছেন— ট্রাম্প যখন মোদিকে “তুখোড় দরকষাকষির নেতা” বলেন, তখন থারুর তা সমর্থন করেছিলেন। তিনি ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়েও মোদির ভূমিকাকে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরেন। এতে দলের অস্বস্তি বাড়ে এবং কংগ্রেস জানিয়ে দেয়— “থারুর যা বলেন, তা দলের বক্তব্য নয়।”
তবে থারুর বারবার বলেন, তিনি যা বলেন, তা “জাতীয় স্বার্থে” বলেন, দলের বিরুদ্ধে নয়। মে ২৩ থেকে শশী থারুরের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল যাবে ওয়াশিংটন, লন্ডন, আবু ধাবি, প্রিটোরিয়া ও টোকিও। তাঁদের কাজ হবে পাকিস্তান থেকে সৃষ্ট জঙ্গি হামলা ও ভারতের পাল্টা পদক্ষেপ সম্পর্কে আন্তর্জাতিক মহলে ভারতের অবস্থান ব্যাখ্যা করা। থারুর নিজে বলেন, “দেশের স্বার্থে যখন আমার দরকার পড়বে, আমি কখনও পিছিয়ে থাকব না। সরকার আমাকে এই দায়িত্ব দেওয়ায় আমি কৃতজ্ঞ।”
শশী থারুরের কূটনৈতিক দক্ষতা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু তাঁর এই স্পষ্টবাদিতা ও বারবার কেন্দ্রীয় সরকারের প্রশংসা কংগ্রেসকে অস্বস্তিতে ফেলছে। আর এখানেই হয়তো বিজেপি রাজনৈতিক লাভের সুযোগ দেখছে। অপারেশন সিন্দুর এখন শুধু সীমান্তের অভিযান নয়, তা হয়ে উঠেছে দেশের রাজনীতিতেও এক কূটনৈতিক খেলা।