সূর্য উঠতেই নতুন করে জীবন ফিরে পেলেন কেরলের নার্স নিমিশা প্রিয়া (Nimisha Priya)। আজ, ১৬ জুলাই, ইয়েমেনে তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সেই সাজা আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। এতদিন ধরে মৃত্যুর ছায়ায় দিন কাটানো নিমিশার জীবনে এই ঘটনাকে ‘আলোয় ফেরা’ বলেই মনে করছেন তাঁর (Nimisha Priya) পরিবার। যদিও এখনই মুক্তি মিলছে না, তবে এই স্থগিতাদেশ অন্তত বাঁচার একটুকু আশার আলো দেখাচ্ছে তাঁকে।
নিমিশার যাত্রাপথ একেবারেই সাধারণ থেকে শুরু হলেও, পরিণতি ভয়াবহ (Nimisha Priya)। ২০০৮ সালে নার্সের চাকরি নিয়ে ইয়েমেনে যান কেরলের পালাক্কাটের বাসিন্দা নিমিশা প্রিয়া। পরে সেখানে শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। তাঁর (Nimisha Priya) স্বামী ও সন্তান ফিরে এলেও, পেশাগত কারণে নিমিশা থেকে যান। ইয়েমেনে স্থানীয় বাসিন্দা তালাল আবদো মাহদির সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ক্লিনিক খোলার পরিকল্পনা থাকলেও, ইয়েমেনের আইন অনুযায়ী কোনও বিদেশি নাগরিক একা ব্যবসা করতে পারেন না (Nimisha Priya)। তাই তালালের সঙ্গে পার্টনারশিপ তৈরি হয়। কিন্তু সেই সম্পর্ক একসময় ভয়ঙ্কর রূপ নেয়।
অভিযোগ, তালাল নিমিশার (Nimisha Priya) পাসপোর্ট কেড়ে নিয়ে তাঁকে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করতেন। সেই অমানবিক নির্যাতন থেকে নিজেকে রক্ষা করতে তিনি এক চরম সিদ্ধান্ত নেন। নিয়মিত ঘুমের ইঞ্জেকশন দিতে দিতে একদিন তালালকে অতিরিক্ত মাত্রায় ইনজেকশন দিয়ে হত্যা করেন। হত্যার প্রমাণ লোপাট করতে দেহ কেটে টুকরো টুকরো করে জল ট্যাঙ্কে ফেলে দেন। পালানোর সময় বিমানবন্দরে তাঁকে গ্রেফতার করে ইয়েমেনের পুলিশ।
২০১৭ সালে শরিয়া আইনের অধীনে নিমিশাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। এরপর বারবার ভারত সরকার কূটনৈতিক স্তরে চেষ্টা করলেও কোনও সুফল মেলেনি। শেষ পর্যন্ত ২০২৩ সালে ইয়েমেনের সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে। প্রেসিডেন্ট রাশাদ আল-আলিমিও প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ করে দেন।
একমাত্র অবশিষ্ট পথ ছিল ‘দিয়া’ বা ব্লাড মানি। ইসলামিক শরিয়া আইনে যদি খুন হওয়া ব্যক্তির পরিবার নির্দিষ্ট ক্ষতিপূরণ নিয়ে খুনিকে ক্ষমা করে, তবে মৃত্যুদণ্ড থেকে মুক্তি মিলতে পারে। তালালের পরিবার দাবি করে ৮ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১ মিলিয়ন ডলার।
নিমিশার পরিবারের পক্ষ থেকে সেই অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা হয়। কিন্তু এরপরও কোনও উত্তর আসেনি। হঠাৎ করেই, মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার আগের রাতে নাটকীয় মোড় নেয় পরিস্থিতি। নিহত তালালের ভাই প্রথমবার আলোচনায় রাজি হন। দীর্ঘ রাত ধরে চলে কথোপকথন। সকালে জানানো হয়, নিমিশার মৃত্যুদণ্ড আপাতত স্থগিত করা হয়েছে।
এই অলৌকিক মোড়ের পেছনে বড় ভূমিকা পালন করেন কেরলের ইসলামিক ধর্মগুরু কান্তাপুরম এপি আবু বকর মুসলিয়ার। তিনি ভারতের সুন্নি মুসলিম সমাজের প্রভাবশালী ‘গ্র্যান্ড মুফতি’ হিসেবে পরিচিত। তাঁর মধ্যস্থতায় ইয়েমেনের ধর্মযাজকদের মাধ্যমে তালালের পরিবারের সঙ্গে সংযোগ তৈরি হয়। ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পরিবারকে বোঝানোর চেষ্টা চালান তিনি। মানবতার দিকটি সামনে তুলে ধরেন ইসলামিক আইনের আলোকে।
মৃত্যুদণ্ড স্থগিত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই নিমিশার পরিবারে স্বস্তির নিঃশ্বাস। স্বামী টমি থমাস জানান, “এই স্থগিতাদেশ আমাদের কাছে আশার আলো। আমরা লড়াই চালিয়ে যাব ওকে বাঁচিয়ে আনতে।”
এখন নিমিশার ভাগ্য নির্ভর করছে একমাত্র তালালের পরিবারের সিদ্ধান্তের উপর। তাঁরা যদি দিয়া মেনে নিয়ে নিমিশাকে ক্ষমা করে, তবেই প্রাণে বাঁচতে পারেন তিনি। আদালতের আর কোনও দ্বার খোলা নেই।