বাংলাদেশে ভাঙা হতে চলেছে কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের (Satyajit Roy) পৈতৃক ভিটে। এই খবর সামনে আসতেই দুই বাংলার সাংস্কৃতিক মহলে ছড়িয়ে পড়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ। বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার হরিকিশোর রায় চৌধুরী রোডে অবস্থিত এই বাড়িটি শুধু সত্যজিৎ রায়ের স্মৃতি বহন করছে না, এটি তাঁর ঠাকুরদা, বিশিষ্ট সাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর (Satyajit Roy) বসতবাড়িও ছিল। বহু দশক ধরে এই ঐতিহাসিক ভবনটি ব্যবহার হচ্ছিল ‘বাংলাদেশ শিশু অ্যাকাডেমি’র ভবন হিসেবে।
কিন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশের রাজনৈতিক পালাবদলের পর, ইউনূস সরকারের অন্তর্বর্তী নেতৃত্বে এই বাড়িটি (Satyajit Roy) ভেঙে ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। এর আগেও দেশটির বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৈতৃক ভিটে ভাঙচুরের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই, এবার সত্যজিৎ রায়ের ভিটে ঘিরে নতুন বিতর্ক।
এই ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার তিনি ইউনূস সরকারকে সরাসরি অনুরোধ জানান এই ঐতিহাসিক ভবন না ভাঙার জন্য। সেইসঙ্গে ভারত সরকারেরও হস্তক্ষেপ দাবি করেন।
মুখ্যমন্ত্রীর এই পদক্ষেপের পর কেন্দ্রীয় সরকার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখে। ভারত সরকারের তরফে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বার্তা পাঠানো হয়, যাতে তারা এই বাড়ি ভাঙার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে। একইসঙ্গে জানানো হয়, ভারত এই ঐতিহাসিক ভবনের সংস্কার ও পুনর্নির্মাণে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। এমনকি সাহিত্যের মিউজিয়াম গড়ে দুই দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সংরক্ষণের প্রস্তাবও দেয় ভারত।
এদিকে, বাংলাদেশের শিশু বিষয়ক আধিকারিক মহম্মদ মেহেদি জামান ‘ডেইলি স্টার’কে জানান, বাড়িটি গত দশ বছর ধরে সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে এবং যেকোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। তাই সেখানে আধা-কংক্রিটের একটি নতুন ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
তবে বাংলাদেশের পুরাতত্ত্ব বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সত্যজিৎ রায়ের এই পৈতৃক ভিটে ১০০ বছরেরও বেশি পুরনো। দেশভাগের পর ১৯৪৭ সালে এই ঐতিহাসিক ভবনটি সরকারের দখলে আসে।
এখন দেখার বিষয়, দুই দেশের কূটনৈতিক আলোচনার পর সত্যজিৎ রায়ের স্মৃতিবিজড়িত এই ঘরকে রক্ষা করা সম্ভব হয় কিনা। ইতিহাস ও সংস্কৃতির এক অমূল্য সম্পদ কি শেষ পর্যন্ত ভাঙনের মুখে পড়ে হারিয়ে যাবে? প্রশ্ন এখন কোটি টাকার।