ভারতের আকাশে নতুন ইতিহাস। বুধবার সকালেই অম্বালা এয়ার ফোর্স স্টেশনের আকাশে গর্জে উঠল রাফালে যুদ্ধবিমান। আর সেই বিমানে চেপেই উড়লেন দেশের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু (President Droupadi Murmu)। পাশে ছিলেন ভারতীয় বায়ুসেনার সাহসিনী উইং কমান্ডার শিবাঙ্গী সিংহ (Shivangi Singh)। এই মুহূর্তের ছবি প্রকাশ্যে আসতেই কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে পাকিস্তানের প্রপাগান্ডা। কারণ, কয়েক মাস আগেই ইসলামাবাদ দাবি করেছিল— “অপারেশন সিন্ধুর”-এর সময় ভারতীয় রাফালে ভূপাতিত হয়েছে এবং তার পাইলট শিবাঙ্গী পাকিস্তানের হাতে বন্দি!
বাস্তবে দেখা গেল সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র। রাফালের ককপিটে বসে হাসিমুখে রাষ্ট্রপতি (President Droupadi Murmu) এবং তাঁর পাশে দৃঢ় শিবাঙ্গী— এই ছবিই যেন ভারতের শক্তি, গর্ব এবং শত্রুর কল্পনার প্রতি এক প্রবল উত্তর।
শিবাঙ্গী সিংহ হলেন ভারতীয় বায়ুসেনার “গোল্ডেন অ্যারোজ স্কোয়াড্রন”-এর সদস্য। চলতি বছরের মে মাসে তিনি রাফালে চালিয়ে পাকিস্তান এবং পিওকে-তে (Pakistan Occupied Kashmir) থাকা অন্তত নয়টি সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিতে নিখুঁত বিমান হামলা চালিয়েছিলেন— সেই অপারেশন সিন্ধুর। উত্তরপ্রদেশের বারাণসীর মেয়ে শিবাঙ্গী ২০১৭ সালে বায়ুসেনায় যোগ দেন। প্রথমে MiG-21 বাইসন উড়িয়েছিলেন, পরে ২০২০ সালে রাফালের জন্য যোগ্যতা অর্জন করেন। একদিকে বিশ্বের প্রাচীনতম যুদ্ধবিমান, অন্যদিকে সর্বাধুনিক রাফালে— দুই মঞ্চেই তাঁর দাপট সমান।
সম্প্রতি তিনি তামিলনাড়ুর তাম্বারামে “ফ্লাইং ইন্সট্রাক্টর স্কুল”-এ কোয়ালিফায়েড ফ্লাইং ইন্সট্রাক্টর (QFI) ব্যাজ পেয়েছেন। তাঁকে সম্মান জানান এয়ার মার্শাল তেজবীর সিংহ।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের দাবি ছিল, অপারেশন সিন্ধুর চলাকালীন রাফালে ধ্বংস হয়েছে এবং পাইলট শিবাঙ্গী বন্দি। এমনকি একটি ভুয়ো ভিডিও ছড়ানো হয় যেখানে দাবি করা হয়েছিল, “আইএএফ প্রধান এপি সিংহ শিবাঙ্গীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন, কারণ তিনি নিখোঁজ।” দ্রুতই ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এই দাবি উড়িয়ে দেওয়া হয়। পিআইবি ফ্যাক্ট চেক জানায়— “ভিডিও সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর।”
এই সমস্ত বিতর্কের মধ্যেই বুধবার রাষ্ট্রপতির এই ঐতিহাসিক উড়ান যেন এক নতুন বার্তা দিল— ভারতের আকাশ অজেয়। দ্রৌপদী মুর্মু রাফালে উড়ে ভারতের রাষ্ট্রপতিদের ইতিহাসে নতুন অধ্যায় লিখলেন। এর আগে ২০২৩ সালের এপ্রিলে অসমের তেজপুর এয়ারবেস থেকে তিনি সু-৩০ এমকেআই তে উড়েছিলেন।
উড়ানের পর রাষ্ট্রপতি অতিথি খাতায় লিখেছেন, “রাফালে প্রথম উড়ানটি ছিল এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা। দেশের প্রতিরক্ষা শক্তিতে যে অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে, তা কাছ থেকে দেখে গর্বে বুক ভরে গেল। ভারতীয় বায়ুসেনা ও অম্বালা ঘাঁটির সমস্ত দলের সদস্যদের অভিনন্দন জানাই এই সফল উড়ানের জন্য।”
রাষ্ট্রপতির এই উড়ান কেবলই আনুষ্ঠানিক নয়, প্রতীকীও বটে— এটি ভারতের সামরিক আত্মবিশ্বাস, নারীশক্তি ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের প্রতীক। পাকিস্তানের তৈরি মিথ্যা প্রচারের সামনে দাঁড়িয়ে শিবাঙ্গীর দৃঢ় উপস্থিতি যেন ঘোষণা করল— ভারতের আকাশে সত্যিই এখন নারীরাই নতুন দিগন্ত খুলছেন।













