মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলিতে হামলার জেরে মধ্যপ্রাচ্যে ফের উত্তেজনা ছড়িয়েছে। এমন এক সংকটজনক সময়ে রবিবার ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে টেলিফোনে গুরুত্বপূর্ণ আলাপচারিতা করলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Modi)। ৪৫ মিনিটব্যাপী এই আলোচনায় উভয় রাষ্ট্রপ্রধানই যুদ্ধ এড়িয়ে দ্রুত শান্তিপূর্ণ সংলাপের মাধ্যমে সমাধানের পক্ষে মত দেন।
প্রধানমন্ত্রী মোদি (PM Modi) তাঁর এক্স (সাবেক টুইটার) পোস্টে লেখেন, “ইরানের প্রেসিডেন্ট @drpezeshkian-র সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিশদে কথা হয়েছে। সাম্প্রতিক সংঘর্ষ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। আমরা দ্রুত উত্তেজনা প্রশমন, সংলাপ ও কূটনীতির পথ অনুসরণের পক্ষে সওয়াল করেছি।“
পেজেশকিয়ান জানান, তিনি ভারতের (PM Modi) ভূমিকাকে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ ও শান্তিপ্রয়াসী’ হিসেবে দেখেন। তিনি ভারতকে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার বলেও অভিহিত করেন। প্রধানমন্ত্রী মোদিকেও (PM Modi) ধন্যবাদ জানান এই সংকটকালে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান নেওয়ার জন্য।
প্রসঙ্গত, শনিবার রাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের ফোর্ডো, নাতানজ ও ইসফাহানের পরমাণু স্থাপনাগুলিতে হামলা চালানোর নির্দেশ দেন। যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ স্টেলথ বোমার এবং টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে এই আক্রমণ চালানো হয়। ট্রাম্প এই হামলাকে “অসাধারণ সামরিক সাফল্য” বলে ঘোষণা করেছেন এবং দাবি করেছেন যে ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু স্থাপনাগুলি “সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস” করা হয়েছে।
একটি মধ্যরাতের ভাষণে ট্রাম্প বলেন, “আমরা শান্তির পক্ষে। তবে যদি তা না আসে, তাহলে ইরানের জন্য আরও ভয়ঙ্কর দিন অপেক্ষা করছে। আরও অনেক লক্ষ্য এখনো বাকি আছে।”
এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন হুঁশিয়ারি দিয়ে জানায়, “প্রতিটি আমেরিকান নাগরিক ও সেনা এখন আমাদের লক্ষ্য। যুক্তরাষ্ট্র অপরাধ করেছে এবং এর মূল্য চুকোতে হবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, আপনি শুরু করেছেন, শেষটা আমরাই করব।” তারা পশ্চিম এশিয়ায় থাকা সমস্ত মার্কিন ঘাঁটির মানচিত্রও সম্প্রচারে দেখায়।
এই পরিস্থিতির মধ্যে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১৩ জুন এক বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে উভয় পক্ষকে উত্তেজনা প্রশমনের এবং কূটনৈতিক পথেই সমাধানের আহ্বান জানায়। ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তর জানায়, ইসরায়েল ও ইরান — উভয়ের সঙ্গেই ভারতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এবং যে কোনও শান্তিপূর্ণ উদ্যোগে ভারত সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
ভারতীয় দূতাবাস জানিয়েছে, ইরানে বসবাসকারী (PM Modi) সমস্ত ভারতীয় নাগরিকদের সচেতন থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে তাদের দূতাবাসের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ও স্থানীয় নিরাপত্তা নির্দেশিকা অনুসরণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই যুদ্ধপরিস্থিতির অর্থনৈতিক প্রভাবও ভারতের (PM Modi) উপর পড়তে পারে। ভারতের ৮৫ শতাংশের বেশি তেল আমদানি হয়, যার বড় অংশই মধ্যপ্রাচ্যের উপসাগরীয় অঞ্চল থেকে আসে। এই উত্তেজনা যদি বয়ে যায়, তবে তেলের দাম বেড়ে যেতে পারে, যার ফলে ভারতের মুদ্রাস্ফীতি ও বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
এছাড়াও, চাবাহার বন্দর ও আন্তর্জাতিক উত্তর-দক্ষিণ পরিবহন করিডর (INSTC)-এর মাধ্যমে ইরানের সঙ্গে ভারতের কৌশলগত যোগাযোগ রয়েছে, যা এই সংঘর্ষ দীর্ঘস্থায়ী হলে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হতে পারে।