বিশ্বখ্যাত ফ্যাশন ব্র্যান্ড PRADA এবার আইনি জটে! ঐতিহ্যবাহী মহারাষ্ট্রের “Kolhapuri Chappal” চুরি করে আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রদর্শনের অভিযোগ উঠেছে এই বিলাসবহুল সংস্থার বিরুদ্ধে। বোম্বে হাইকোর্টে দায়ের হয়েছে একটি জনস্বার্থ মামলা (PIL), যেখানে PRADA-র বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে—”Kolhapuri Chappal” যা একটি GI (Geographical Indication) ট্যাগপ্রাপ্ত পণ্য, তার নকশা ও ঐতিহ্য অবৈধভাবে ব্যবহার করেছে এই আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড।
এই মামলা দায়ের করেছেন মুম্বই ও পুণের একদল বৌদ্ধিক সম্পত্তি অধিকার (Intellectual Property Rights) বিশেষজ্ঞ আইনজীবী, নেতৃত্বে রয়েছেন অ্যাডভোকেট গণেশ এস. হিঙ্গমিরে। তাদের দাবিতে PRADA ও Prada India Fashion Private Limited-কে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে কোনও GI ট্যাগপ্রাপ্ত ভারতীয় ঐতিহ্যবাহী পণ্যের অনুমতি ছাড়া ব্যবহার না করার প্রতিশ্রুতিও দাবি করা হয়েছে।
মামলায় আরও দাবি, এই ঘটনার জন্য ভারতীয় কারুশিল্পীদের সম্মান ও আর্থিক ক্ষতির ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কারণ Kolhapuri chappal কেবলমাত্র একজোড়া জুতো নয়, এটি ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক। Kolhapur জেলার নাম অনুসারে নামকরণ হওয়া এই চপ্পল পশ্চিম মহারাষ্ট্রে হাতে তৈরি হয়, এবং হাজার হাজার কারিগর এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত।
ঘটনার সূত্রপাত ২০২৫ সালের ২২শে জুন মিলানে আয়োজিত PRADA-র Spring Summer Men’s Collection শোতে। সেখানেই র্যাম্পে যে স্যান্ডেল প্রদর্শিত হয়, তা দেখে অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ উগরে দেন এবং Kolhapuri chappal সঙ্গে তার সাদৃশ্যের দিকটি তুলে ধরেন। ভিডিওগুলি ভাইরাল হতেই বিতর্ক চরমে ওঠে।
PRADA-র তরফ থেকে স্বীকার করা হয়েছে যে, তাদের ডিজাইনগুলি “ভারতীয় ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প-অনুপ্রাণিত”, তবে GI ট্যাগের বিষয়ে কোনও সম্মতি বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়নি। এমনকী, চপ্পল ডিজাইনটি ব্যবহারের আগে GI ধারকদের থেকে অনুমতিও নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।
আবেদনে বলা হয়েছে, এটি কেবল চৌর্যবৃত্তি নয়, বরং একটি গোটা সম্প্রদায়ের বৌদ্ধিক, নৈতিক ও আর্থিক অধিকার হরণ। এটি একটি গুরুতর “সাংস্কৃতিক শোষণ”। এভাবে কোনও আন্তর্জাতিক বিলাসবহুল ব্র্যান্ড, ভারতীয় কারিগরদের কৃতিত্ব ছাড়াই ঐতিহ্য লুঠ করে বিশ্ব বাজারে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করছে, অথচ এর প্রকৃত স্রষ্টারা উপেক্ষিত।
জনস্বার্থ মামলায় দাবি করা হয়েছে, GI ট্যাগ, ডিজাইন রেজিস্ট্রেশন বা নৈতিক অধিকারের মাধ্যমে ভারতের প্রাচীন হস্তশিল্পগুলিকে সুরক্ষা দিতে হবে। একমাত্র স্বচ্ছতা, প্রাপ্য কৃতিত্ব ও ন্যায্য অর্থপ্রদান নিশ্চিত করলেই ফ্যাশনের বিশ্ব এখনকার একমুখী ‘extraction’-এর জায়গা থেকে পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে ‘collaboration’-এর দিকে এগোতে পারবে।
এই মামলাটি এখনও বোম্বে হাইকোর্টে শুনানির জন্য তালিকাভুক্ত হয়নি, তবে গোটা দেশের সংস্কৃতিপ্রেমী মহল ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ।