জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার (Pahalgam Attack) তদন্তে বিস্ফোরক তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। তারা একাধিক সূত্র ও প্রযুক্তিগত নজরদারি বিশ্লেষণ করে সন্ত্রাসের রূপরেখা ও গতিবিধি প্রায় স্পষ্ট করে তুলেছেন। জানা গিয়েছে, পাকিস্তান ঘাঁটির জঙ্গি গোষ্ঠী ডেরা কি গলি (ডিকেজি) দিয়ে পুঞ্চ হয়ে ভারতে প্রবেশ করেছিল এবং ২০২২ সালের শেষ বা ২০২৩ সালের শুরু থেকেই সক্রিয় ছিল জম্মু অঞ্চলে(Pahalgam Attack)।
প্রথম বড় হামলার ঘটনা ঘটায় ২১ ডিসেম্বর ২০২৩-এ, যখন তারা পুঞ্চের সূরনকোট এলাকার বাফলিয়াজে ডিকেজি রুটে ভারতীয় সেনার একটি কনভয়ে অতর্কিতে হামলা চালিয়ে চার জওয়ানকে শহিদ করে (Pahalgam Attack)। এরপর ২০২৪ সালের মে মাসে ফের পুঞ্চেরই সানাই এলাকায় বকরাবাল মহল্লায় ভারতীয় বায়ুসেনার গাড়ির উপর হামলা চালায় তারা (Pahalgam Attack)।
দীর্ঘদিন ধরে পুঞ্চের জঙ্গলঘেরা পাহাড়ি এলাকায় সক্রিয় থাকার পর, ২০২৪ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বরে আবার ডিকেজি-বাফলিয়াজ রুট ধরে কাশ্মীরে প্রবেশ করে জঙ্গিরা (Pahalgam Attack)। কাশ্মীরে ঢোকার পর তারা দু’টি ছোট মডিউলে ভাগ হয়ে যায়—একটি গুলমার্গের দিকে ও অপরটি সোনমার্গের দিকে রওনা দেয়।
২০ অক্টোবর, সোনমার্গে এক স্থানীয় জঙ্গি জুনায়েদ ও এক পাক জঙ্গি মিলে অ-কাশ্মীরি শ্রমিকদের লক্ষ্য করে হামলা চালায়। তার মাত্র ৬ দিন পর, ২৬ অক্টোবর, গুলমার্গে সেনার ট্রাকে হামলা করে দ্বিতীয় মডিউলটি।
এই ঘটনার পর একটি গুরুত্বপূর্ণ এনকাউন্টারে জুনায়েদ ও এক পাক জঙ্গিকে শ্রীনগরের হারওয়ান এলাকায় ঘিরে ফেলে নিরাপত্তা বাহিনী। গুলিযুদ্ধে জুনায়েদ মারা গেলেও পাক জঙ্গিটি পালাতে সক্ষম হয়। এই অভিযান টানা ১৫ দিন ধরে চলে। তদন্তে সবচেয়ে বড় ব্রেকথ্রু আসে তখনই, যখন জুনায়েদের মোবাইল ফোন থেকে উদ্ধার হওয়া ছবিতে আগের পুঞ্চ হামলার প্রমাণ পাওয়া যায়, যা স্পষ্ট করে দেয় কিভাবে এই জঙ্গি দল বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আক্রমণ চালাচ্ছিল।
তদন্তে আরও জানা যায়, হামলার ঠিক আগে দুই মডিউল আবার একত্রিত হয়ে পাহেলগাঁও হামলা চালায় (Pahalgam Attack)। হামলার পরবর্তী প্রতিক্রিয়া হিসেবে নিরাপত্তা সংস্থাগুলি হাপতনার, ত্রাল ও ডি এইচ পোরা—এই তিনটি এলাকায় সন্দেহভাজন রেডিও সংকেত চিহ্নিত করেছে, যা থেকে ধারণা, এই অঞ্চলগুলিতে তাদের সম্ভাব্য গা ঢাকা দেওয়ার জায়গা রয়েছে। তবে সন্দেহ করা হচ্ছে, এই সংকেত ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্ত করার জন্য পাঠানো হয়েছিল, যাতে জঙ্গিরা অন্যদিকে গা ঢাকা দিতে পারে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যা তদন্তে উঠে এসেছে তা হল, জঙ্গিরা শুধুমাত্র পাহাড়ি পথ ব্যবহার করছিল, যাতে তারা রাস্তাঘাটে থাকা নজরদারি ক্যামেরা ও চেকপোস্টের নজর এড়িয়ে যেতে পারে। এই পদ্ধতি তাদের চলাফেরাকে করে তুলেছিল অত্যন্ত গোপনীয় এবং সুরক্ষা বাহিনীর কাছে চিহ্নিত করা কঠিন।
বর্তমানে গোটা কাশ্মীর উপত্যকা জুড়ে নিরাপত্তা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্কতা নিয়ে অভিযান চালাচ্ছে। টার্গেট একটাই—এই ভয়ঙ্কর ও ভ্রাম্যমাণ জঙ্গি গোষ্ঠীর বাকি সদস্যদের খুঁজে বের করে নিঃশেষ করা।