মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের (Donald Trump) লাগাতার শুল্ক বাড়ানোর হুঁশিয়ারি এবার সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেল নয়াদিল্লির কাছে। সোমবার ফের নিজের সামাজিক মাধ্যমের পোস্টে ভারতকে নিশানা করে ট্রাম্প (Donald Trump) অভিযোগ তোলেন— “ভারত রাশিয়া থেকে প্রচুর তেল কিনছে না শুধু, সেই তেল খোলা বাজারে বিক্রি করে বিপুল মুনাফাও করছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনে যত মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে, তাতে তাদের বিন্দুমাত্র উদ্বেগ নেই।”
রুশ তেল নিয়ে এই বিতর্ক অবশ্য নতুন নয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই ট্রাম্প (Donald Trump) বারবার ভারতের উপর ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের দৃষ্টিতে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ যে কোনও দেশই ‘সমস্যা’— এবং সেই তালিকায় ভারতও রয়েছে। এর আগে পারস্পরিক শুল্ক নিয়ে আলোচনা হলেও তাতে কোনও ইতিবাচক সমাধান আসেনি, বরং ক্রমাগত চাপের মুখে পড়তে হয়েছে নয়াদিল্লিকে।
তবে এবার চুপ থাকেনি ভারত। সোমবার বিদেশ মন্ত্রক এক বিস্ফোরক বিবৃতি জারি করে ট্রাম্পের (Donald Trump) অভিযোগের জবাব দিয়েছে ছয় দফায়। তাতে সাউথ ব্লকের সাফ কথা— ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর আমেরিকা ও ইউরোপ যেভাবে ভারতকে রুশ তেল আমদানির জন্য আক্রমণ করেছে, তা একপাক্ষিক এবং অন্যায্য। বাস্তবে, ভারত এই আমদানি বাড়িয়েছিল মূলত ইউরোপকেই তেল সরবরাহ করার জন্য, কারণ যুদ্ধের জেরে সরাসরি রফতানি তখন প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। দেশের জনগণকে সাশ্রয়ী মূল্যে জ্বালানি পৌঁছে দেওয়াই ছিল এই সিদ্ধান্তের মূল উদ্দেশ্য।
বিদেশ মন্ত্রকের আরও অভিযোগ— যারা আজ ভারতকে সমালোচনা করছে, তারাই রাশিয়ার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। ২০২৪ সালে ইউরোপ ও রাশিয়ার বাণিজ্যিক লেনদেন হয়েছে প্রায় ৬ হাজার ৭০০ কোটি ইউরো, যা ভারতের তুলনায় বহু গুণ বেশি। তাছাড়া এই বাণিজ্য শুধুমাত্র জ্বালানি নয়, সার, রাসায়নিক, লোহা-সহ নানা ক্ষেত্র জুড়ে বিস্তৃত। এমনকি আমেরিকাও প্রতিবছর রাশিয়া থেকে ইউরেনিয়াম হেক্সাফ্লোরাইড, প্যালাডিয়াম এবং সার আমদানি করে— এবং এই যুদ্ধকালেও তা বন্ধ হয়নি।
সুতরাং, নয়াদিল্লির সাফ বার্তা— ভারতকে একতরফা আক্রমণ সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। দেশের জাতীয় ও অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করাই হবে প্রতিটি সিদ্ধান্তের মূল ভিত্তি, যত চাপই আসুক না কেন।