তেলেঙ্গানার জোগুলাম্বা গড়ওয়াল জেলায় ঘটে যাওয়া ৩২ বছরের বেসরকারি সার্ভেয়ার তেজেশ্বরের নির্মম খুনে (Murder) স্তব্ধ গোটা রাজ্য। এক মাস আগেই বিয়ে হয়েছিল তেজেশ্বরের। খুনের ঘটনায় তাঁর স্ত্রী ঐশ্বর্য, ঐশ্বর্যের প্রেমিক তিরুমলা রাও (একজন ব্যাঙ্ক ম্যানেজার), ঐশ্বর্যের মা এবং ভাড়াটে খুনি চক্রের (Murder) কয়েকজন-সহ মোট আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গড়ওয়াল জেলার পুলিশ সুপার টি শ্রীনিবাস রাও জানান, এই হত্যাকাণ্ড (Murder) ছিল সম্পূর্ণ পূর্বপরিকল্পিত। খুনের মূল কারণ ছিল সম্পত্তি দখল, পরকীয়া সম্পর্ক এবং ব্যক্তিগত লাভ। পুলিশ জানায়, ঐশ্বর্য তেজেশ্বরকে বিয়ের আগেই তিরুমলা রাওয়ের সঙ্গে সম্পর্কে ছিলেন এবং সেই সময় থেকেই তাঁর খুনের (Murder) ছক কষা শুরু হয়।
মে মাসের ১৮ তারিখে তেজেশ্বর ও ঐশ্বর্যের বিয়ে হয় (Murder)। বিয়ের ঠিক একমাস পর ১৭ জুন, তেজেশ্বর নিখোঁজ হয়ে যান। কয়েক দিন পর কুরনুলের এক রিয়েল এস্টেট প্রজেক্ট এলাকায় মেলে তাঁর মৃতদেহ (Murder)। পুলিশি তদন্তে উঠে আসে, ১৭ জুন তেজেশ্বরকে একটি “সার্ভে”-র ছুতোয় গাড়িতে তুলেছিল খুনি চক্র। ভাড়াটে খুনিরা গাড়িতেই তাঁকে খুন করে। এই খুনের জন্য তিরুমলা রাও নাকি দুই লক্ষ টাকা দিয়েছিল ওই সুপারি গ্যাংকে।
এই ঘটনা বহু মানুষের মনে করিয়ে দিচ্ছে মেঘালয়ের হানিমুন হত্যা কাণ্ডের স্মৃতি, যেখানে এক নববধূ নিজের স্বামীকে খুন (Murder) করিয়েছিলেন প্রেমিকের সঙ্গে নতুন জীবন শুরু করতে। ঐশ্বর্য ও তিরুমলা রাও সেই মেঘালয় কাণ্ড থেকে শিক্ষা নিয়ে কীভাবে পুলিশকে বিভ্রান্ত করা যায়, কী কী ভুল এড়িয়ে যাওয়া যায়—সেই নিয়ে বিস্তর আলোচনা করেছিল, বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তবে শেষরক্ষা হয়নি। গ্যাংটির যাবতীয় মোবাইল কল রেকর্ড, GPS ডেটা, ২০০০-রও বেশি কথোপকথনের অডিও ক্লিপ এবং সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশ পুরো ষড়যন্ত্র ফাঁস করে। এমনকি জানা গিয়েছে, এই খুনের পর ঐশ্বর্য ও তিরুমলা লাদাখে পালিয়ে গিয়ে পরে বিদেশে পাড়ি দেওয়ার ছক কষেছিল।

এ ঘটনায় ঐশ্বর্য, তিরুমলা রাও, ঐশ্বর্যের মা সুজাতা এবং ভাড়াটে খুনি নাগেশ, পরশুরাম, রাজু-সহ আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে খুনে ব্যবহৃত গাড়ি, দুটি কুড়ুল, একটি ছুরি, দশটি মোবাইল ফোন, একটি GPS ট্র্যাকার এবং নগদ ১.২০ লক্ষ টাকা।
তিরুমলা রাওকে গ্রেপ্তার করা হয় শমসাবাদ বিমানবন্দরের কাছে, পালানোর চেষ্টা করার সময়। পুলিশ জানিয়েছে, ঐশ্বর্যের ভাই নবীনের রহস্যজনক মৃত্যুর বিষয়েও নতুন করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে।
গড়ওয়াল এসপি টি শ্রীনিবাস রাও বলেন, “এই কাণ্ড প্রমাণ করে, লোভ ও অনৈতিক সম্পর্ক কোথায় নিয়ে যেতে পারে। অপরাধীরা যতই পরিকল্পিতভাবে খুন করুক, যতই প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করুক, আমরা দ্রুততার সঙ্গে তদন্ত করে তেজেশ্বরের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করেছি।”
এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড শুধু তেলেঙ্গানায় নয়, দেশজুড়ে আলোড়ন ফেলেছে। সমাজে বিয়েতে প্রতারণা, চরিত্রহীন সম্পর্ক এবং ডিজিটাল প্রমাণ কীভাবে অপরাধ ফাঁস করতে সাহায্য করছে—তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে সর্বত্র। সোশ্যাল মিডিয়ায় গড়ওয়াল পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপ ও তৎপরতার প্রশংসা করছেন সবাই।