পাহেলগাঁওয়ে পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাসী হামলার পর ভারতের পাল্টা সামরিক অভিযান ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর মাধ্যমে জঙ্গি ও তাদের মদতদাতাদের লক্ষ্য করে একের পর এক আঘাত হানার পর (India Pakistan Tension), পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও এক নতুন জটিলতা সৃষ্টি হয় যুদ্ধবিরতির (India Pakistan Tension) দিন। ওই দিন চারটি দেশ — ভারত, পাকিস্তান, আমেরিকা ও পরে চীন — যুদ্ধবিরতি নিয়ে নিজেদের মতো করে বিবৃতি দেয় (India Pakistan Tension)। কিন্তু প্রত্যেকের বক্তব্য আলাদা, যা আন্তর্জাতিক স্তরে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে (India Pakistan Tension)।
ভারতের অবস্থান স্পষ্ট
ভারতের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়, পাকিস্তানের ডিরেক্টর জেনারেল অফ মিলিটারি অপারেশনস (DGMO) নিজে ফোন করে ভারতের DGMO-র কাছে যুদ্ধবিরতির অনুরোধ করেন। এই তথ্যটি অস্বীকার করার সুযোগ নেই। যদিও পাকিস্তান ও তার মিত্ররা নিজেদের মতো করে বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করেছে।
‘ট্রাম্প ঝাঁপিয়ে পড়লেন’ – আমেরিকার দাবি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন যে এই যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতাকারী নাকি তাঁর প্রশাসন। তিনি Truth Social-এ লেখেন, “আমেরিকার মধ্যস্থতায় দীর্ঘ রাতের আলোচনার পর ভারত ও পাকিস্তান সম্পূর্ণ ও তৎক্ষণাৎ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।” যদিও ভারত স্পষ্ট জানিয়েছে যে এই যুদ্ধবিরতি সম্পূর্ণভাবে দ্বিপাক্ষিক ভিত্তিতে হয়েছে এবং ট্রাম্পের ঘোষণার সঙ্গে ভারতের কোনও সম্পর্ক নেই।
চীনের অসন্তোষ?
NDTV সূত্রে জানা গিয়েছে, যুদ্ধবিরতির দিন চীনও শেষ মুহূর্তে বিবৃতি দেয় এবং দাবি করে যে তাদের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে কথা বলেছেন। তবে সেই বিবৃতিতে শুধু চীনের বক্তব্যই মূলত তুলে ধরা হয়, ভারতের কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইসলামাবাদ যুদ্ধকালীন সংকটে ওয়াশিংটনের সঙ্গে যোগাযোগ করায় চীন ক্ষুব্ধ হয়। চীন মনে করে দক্ষিণ এশিয়া তাদের প্রভাব অঞ্চলে পড়ে।
পাকিস্তানের দ্বিচারিতা
পাকিস্তান প্রথমে ট্রাম্পের ঘোষণার পরপরই যুদ্ধবিরতির কথা বলে বিবৃতি দেয়। এরপর আবার নিজেরাই সীমান্তে ড্রোন হামলা চালিয়ে যুদ্ধবিরতি ভাঙে। পরে চীনের সঙ্গে কথোপকথনের কথা জানিয়ে আরেকটি বিবৃতি দেয়। পাকিস্তান দাবি করে, চীন ‘দায়িত্বশীল মনোভাবের জন্য’ পাকিস্তানের প্রশংসা করেছে।
ভারতের কড়া বার্তা
যুদ্ধবিরতির পরও যখন পাকিস্তানি ড্রোন ভারতে অনুপ্রবেশ করে, তখন ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রী সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, পাকিস্তান যদি ফের উস্কানিমূলক কাজ করে, তবে ভারত কঠোর ও কার্যকর প্রতিক্রিয়া জানাবে। তিনি আরও জানান, ভারত সবকিছু স্পষ্টভাবে আমেরিকাকে জানিয়ে দিয়েছে — আমরা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছি এবং পাকিস্তান থামলে আমরাও থামব। যুদ্ধবিরতি চাইলেই পাকিস্তানকে ভারতকে সরাসরি জানাতে হবে।
দ্বিপাক্ষিক চুক্তির ভিত্তিতে যুদ্ধবিরতি
পরে পাকিস্তানের DGMO ভারতীয় DGMO-কে ফোন করে যুদ্ধবিরতির আবেদন করেন। ভারত জানিয়ে দেয়, সন্ত্রাসবাদ মেনে নেওয়া হবে না এবং আগামীতেও যদি উস্কানি দেওয়া হয়, তার জবাব দেওয়া হবে।
ভারতের বিদেশ সচিব বলেন, “আজ দুপুর ৩টা ৩৫ মিনিটে পাকিস্তানের DGMO ভারতের DGMO-কে ফোন করেন। উভয়পক্ষ রাজি হয় যে বিকেল ৫টা থেকে স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে সব ধরনের সামরিক অভিযান বন্ধ থাকবে। আগামী ১২ মে দুপুর ১২টায় দুই DGMO আবার কথা বলবেন।” এইভাবেই বহুপাক্ষিক কূটনৈতিক নাটক শেষে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয় — যদিও প্রতিটি দেশের বিবৃতিতে ছিল নিজস্ব রাজনৈতিক স্বার্থ ও প্রচারের ছাপ।