আরজেডি (রাষ্ট্রীয় জনতা দল)-র অন্দরেই যেন বিস্ফোরণ। দলের সুপ্রিমো লালু প্রসাদ যাদব রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর বড় ছেলে তেজ প্রতাপ যাদবকে (Tej Pratap Yadav) দল থেকে বহিষ্কার করেছেন। একই সঙ্গে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, “এই মুহূর্ত থেকে তেজ প্রতাপের (Tej Pratap Yadav) সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই—না ব্যক্তিগত, না রাজনৈতিক।”
এই নাটকীয় ঘোষণা এল একদিন পর, যখন তেজ প্রতাপ ((Tej Pratap Yadav) সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি করেছিলেন, তিনি গত ১২ বছর ধরে ‘অনুষ্কা যাদব’ নামের এক মহিলার সঙ্গে সম্পর্কে রয়েছেন। যদিও কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই পোস্ট মুছে ফেলা হয়। পরে তেজ প্রতাপ এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, “আমার সোশ্যাল মিডিয়া হ্যাক করা হয়েছে। কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে ছবি বিকৃতি করে আমাকে এবং আমার পরিবারকে অপদস্থ করার চেষ্টা করছে। আমার শুভাকাঙ্ক্ষীদের অনুরোধ করছি, গুজবে কান দেবেন না।”
এই ঘটনা এমন এক সময় ঘটল, যখন বিহারে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে আরজেডি পুরোদমে প্রস্তুতি নিচ্ছে, এবং দলের দায়িত্ব লালুর কনিষ্ঠ পুত্র তেজস্বী যাদবের কাঁধে। এমন পরিস্থিতিতে পারিবারিক ও রাজনৈতিক বিতর্ক দলের ভিতরেই অসন্তোষ তৈরি করেছে ((Tej Pratap Yadav)।
তেজস্বী যাদব এই নিয়ে সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া দিয়ে বলেন, “যা ঘটছে, তা আমার পছন্দ নয়। রাজনৈতিক জীবন আর ব্যক্তিগত জীবন আলাদা। তবে এমন আচরণ বরদাস্ত করা যায় না। ও প্রাপ্তবয়স্ক, নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নেবে।”
তেজ প্রতাপ যাদব ২০১৫ সালে সক্রিয় রাজনীতিতে আসেন এবং বর্তমানে তিনি দ্বিতীয়বারের জন্য বিধায়ক। বিহার সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী হলেও, বারবার নানা বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে খবরের শিরোনামে থেকেছেন। সম্প্রতি তাঁকে নিজের নিরাপত্তারক্ষীকে হুমকি দিতে দেখা যায়, আর এক ঘটনায় হেলমেট ছাড়া বাইক চালানোর ভিডিও ভাইরাল হয়।
তবে এই প্রথম নয়। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় বিদ্রোহী প্রার্থীদের সমর্থন করে দলের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছিলেন। এমনকি “লালু-রাবড়ী মোর্চা” নামে আলাদা রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মও তৈরি করেছিলেন। পরে দলীয় সদর দফতরে গিয়ে সরাসরি আরজেডি সভাপতির চেয়ারে বসেন, যা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে জেডিইউ-র মুখপাত্র নীরজ কুমার কটাক্ষ করে বলেন, “পুত্রের কীর্তি চাপা দিতে লালু প্রসাদ এখন নাটক করছেন। হ্যাকিংয়ের অজুহাত দিয়ে নিজের ভুল চাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে তেজ প্রতাপ।” তিনি আরও বলেন, “তেজ প্রতাপের প্রাক্তন স্ত্রী ঐশ্বর্য রাইয়ের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের সময় লালু নিশ্চুপ ছিলেন। আজ দলীয় ভাবমূর্তি বাঁচাতেই কঠোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।”
২০১৮ সালে তেজ প্রতাপ ও বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দরোগা প্রসাদ রাইয়ের নাতনী ঐশ্বর্য রাইয়ের বিয়েতে ব্যাপক হইচই হলেও, বিয়ের কয়েক মাসের মধ্যে তিনি যাদব পরিবার ছাড়েন। অভিযোগ করেছিলেন, তেজ প্রতাপ এবং তাঁর পরিবার তাঁকে মানসিক ও শারীরিকভাবে হেনস্থা করছিল।
বর্তমানে, তেজ প্রতাপের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে কী হবে তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে, বিশেষত যখন পরিবারের ভেতর থেকেই তাঁকে প্রকাশ্যে বিরোধিতা করে বহিষ্কার করা হয়েছে।
