গর্ভবতী অবস্থায় পৈশাচিক নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করলেন ২৩ বছরের তরুণী ফাসিলা। মর্মান্তিক এই ঘটনা ঘটেছে কেরালার (Kerala) ত্রিশূরের ভেল্লাঙ্গুলারে। স্বামী ও শাশুড়ির লাগাতার শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনে জর্জরিত হয়ে শেষমেশ আত্মহত্যার পথ বেছে নেন ফাসিলা। আত্মহত্যার আগে নিজের মাকে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো বার্তায় যেভাবে নির্যাতনের কথা জানিয়েছেন, তা রীতিমতো গা শিউরে ওঠার মতো (Kerala)।
গত ২৯ জুলাই স্বামীর বাড়ি থেকে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়। পরদিনই আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে ফাসিলার স্বামী নওফাল ও শাশুড়ি রামলাকে গ্রেফতার করে আদালতের নির্দেশে জেল হেফাজতে পাঠানো হয় (Kerala)।
মৃত্যুর আগেই ফাসিলা (Kerala) তাঁর মাকে একাধিক হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে জানান, তিনি দ্বিতীয়বারের জন্য গর্ভবতী ছিলেন। কিন্তু সেই অবস্থাতেই স্বামী তাঁকে পেটাত, পেটেও লাথি মারত। এর ফলে তাঁর হাত ভেঙে যায়। শাশুড়িও প্রতিদিন তাঁকে মানসিকভাবে হেনস্থা করত বলে অভিযোগ (Kerala)। এক হৃদয়বিদারক বার্তায় ফাসিলা লিখেছিলেন, “আমি মরছি… না হলে ওরা মেরে ফেলবে।”
এই ঘটনাটি আত্মহত্যায় প্ররোচনা এবং গার্হস্থ্য হিংসার এক চরম উদাহরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে (Kerala)। ফাসিলার মরদেহ ত্রিশূরের সরকারি মেডিকেল কলেজে ময়নাতদন্তের পর তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তাঁর পেছনে রইল একমাত্র ছোট্ট ছেলে।
দুঃখজনক হলেও সত্য, এই ঘটনাটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। চলতি জুলাই মাসেই একাধিক মালায়ালি মহিলা নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
এই মাসের শুরুতে, সংযুক্ত আরব আমিরশাহির শারজায় আত্মঘাতী হন ২৯ বছরের অতুল্যা সাথীশ, যিনি কোল্লামের বাসিন্দা ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে স্বামীর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছিলেন তিনি। মৃত্যুর আগে নিজের বোনকে পাঠানো ভয়েস নোটে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আর সহ্য করতে পারছেন না। পরবর্তীতে জানা যায়, অতুল্যার স্বামী নিজেই মেনে নিয়েছিলেন যে তিনি স্ত্রীর ওপর অত্যাচার করতেন, এবং তা ‘ভালোবাসা’র কারণেই করেছেন বলে দাবি করেন।
এরপরই আরও এক ভয়ানক ঘটনা সামনে আসে। ৩৩ বছর বয়সি বিপাঞ্জিকা মানি, যিনি কোল্লামেরই বাসিন্দা ছিলেন, নিজের দেড় বছরের কন্যা বৈভবীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করার পর আত্মহত্যা করেন। ঘটনাস্থল ছিল শারজার আল নাহদা এলাকা। আত্মহত্যার আগে ফেসবুকে একটি দীর্ঘ সুইসাইড নোট লেখেন বিপাঞ্জিকা, যেখানে তিনি তাঁর স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লাগাতার অত্যাচারের বিবরণ দেন।
তাঁর অভিযোগ ছিল, বিয়ের সময় পণ কম দেওয়া হয়েছে, গাড়ি দেওয়া হয়নি—এই কারণ দেখিয়ে দিনের পর দিন তাঁকে ‘ভিখারিনী’ বলা হত। এমনকি গর্ভাবস্থার সময়ও তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। শারীরিক নিগ্রহ তো ছিলই, স্বামী পর্নো ছবি দেখে জোর করে যৌন নির্যাতন করত বলেও অভিযোগ।
এই সব ঘটনার মধ্য দিয়ে এক ভয়ংকর ও অমানবিক বাস্তবতাই উঠে আসছে—যেখানে মালায়ালি মহিলারা পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়ে একের পর এক চরম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছেন।