অপারেশন সিঁদুর নিয়ে উত্তাল লোকসভা। এমন এক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতা রাখার সম্ভাবনা থাকলেও, সোমবার লোকসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে গর্জে ওঠেন শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (Kalyan Banerjee)। জাতীয় নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা এবং রাজনৈতিক দায়বদ্ধতার প্রশ্নে কেন্দ্রীয় সরকারকে একের পর এক তীক্ষ্ণ প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করলেন তিনি। এবং সেইসঙ্গে অত্যন্ত কৌশলে তুলে ধরলেন ‘বাঙালি অস্মিতা’ এবং ভাষার অস্তিত্বের প্রসঙ্গ (Kalyan Banerjee)।
বক্তৃতার শুরুতেই কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (Kalyan Banerjee) স্মরণ করেন উধমপুরে শহিদ হওয়া বাংলার সাহসী সেনা জওয়ান ঝন্টু আলি শেখকে। স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, এই অপারেশন বা প্রত্যাঘাতে কোনও রাজনৈতিক দলের নয়, একমাত্র কৃতিত্ব ভারতীয় সেনার। তাঁর কথায়, “সেনাবাহিনীর সাহস ও ত্যাগই এই সাফল্যের নেপথ্যে। এই কৃতিত্ব কোনও রাজনীতিকের হতে পারে না।”
কিন্তু এখানেই থেমে থাকেননি তিনি (Kalyan Banerjee)। পাকিস্তানের পেহেলগাঁওয়ে বিএসএফ ও সিআইএসএফ-এর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, “যখন হামলা হল, তখন কী করছিল কেন্দ্রীয় আধাসেনা বাহিনী? আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার এত বড় ফাঁক কীভাবে?” এরপরেই মোদী সরকারের ‘পাহারাদার’ স্লোগানকে কটাক্ষ করে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “২০১৪ সাল থেকে শুনে আসছি—প্রধানমন্ত্রী পাহারাদার! বাহ, এমন পাহারাদার যারা চোখের সামনে ঢুকে ২৬ জনকে মেরে দেয়? প্লিজ, আর পাহারা দেবেন না।”
এরপর ভারতের যুদ্ধনীতির প্রসঙ্গ টেনে এনে, সংঘর্ষবিরতির সিদ্ধান্তকে তীব্রভাবে সমালোচনা করেন তিনি। বলেন, “পাকিস্তানকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার আবেগে গা ভাসিয়েছিল দেশের ১৪০ কোটি মানুষ। ঠিক সেই মুহূর্তেই হঠাৎ সংঘর্ষবিরতি! ৯০ রানে ব্যাটার নামিয়ে নেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত। মানুষ হতবাক। আমরা জানতেই পারিনি কী হল। অথচ দেখি, ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে জানিয়ে দিচ্ছেন ভারতের অবস্থান! এর চেয়ে লজ্জার আর কী হতে পারে? ভারতের কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট!”
এই জায়গা থেকেই বক্তৃতার মোড় ঘুরিয়ে ‘বাঙালি’ পরিচয় এবং ভাষার অধিকারকে সামনে আনেন কল্যাণ। উচ্চারণ করেন কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের বিখ্যাত কবিতা ‘বোধন’-এর লাইন। বলেন, “সেই সময় সরকারের মধ্যেও সুকান্তের মতো জেগে ওঠার উদ্যম থাকা উচিত ছিল। কিন্তু কী হল? মানুষের ইচ্ছাকেই চুপ করিয়ে দেওয়া হল। আপনার (মোদীর) সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। আমি গর্বিত বাঙালি। বাংলা ভাষায় কথা বলি। যদি তাতে দোষ হয়, তাহলে আমাকে গ্রেফতার করুন। কিন্তু জানবেন—রবীন্দ্রনাথ আর নজরুল আমার বুকে রয়েছেন।”
এই বক্তব্যের সময় লোকসভায় উপস্থিত সাংসদদের মধ্যেও তীব্র আলোড়ন দেখা যায়। তৃণমূলের এই ভাষণ ঘিরে রাজনৈতিক মহলেও শুরু হয়েছে চর্চা।