ভারতের উপরাষ্ট্রপতি পদ থেকে আচমকা ইস্তফা দিলেন জগদীপ ধনখড় (Jagdeep Dhankhar)। সোমবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতিকে লেখা এক চিঠিতে তিনি নিজের পদত্যাগের কথা জানান এবং শারীরিক অসুস্থতাকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন। তবে তাঁর ইস্তফা পত্র সামনে আসার ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই রাজনৈতিক মহলে জল্পনার ঝড় উঠেছে (Jagdeep Dhankhar)। বিরোধীদের একাংশ স্পষ্টভাবে বলছেন, এ সিদ্ধান্তের পিছনে রয়েছে “গভীরতর কারণ”।
অবশ্যই প্রশ্নটা ওঠে, সোমবার সকালেও রাজ্যসভার ভাইস চেয়ারম্যানের আসনে বসেছিলেন ধনখড় (Jagdeep Dhankhar)। এমনকি বাদল অধিবেশনের ব্যস্ত সময়ের মধ্যেও তিনি নিয়মমাফিক সংসদীয় কাজ চালিয়ে যান। তাহলে হঠাৎ কী এমন ঘটল, যার জেরে রাত ৯টার পর রাষ্ট্রপতির দপ্তরে পত্র পাঠিয়ে ইস্তফা দিলেন তিনি (Jagdeep Dhankhar)?
জানা গিয়েছে, সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল সংসদের বিজনেস অ্যাডভাইজরি কমিটির বৈঠক। এই কমিটিতে আলোচনার বিষয়বস্তু, সময় ইত্যাদি ঠিক হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জে.পি. নাড্ডা ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরণ রিজিজু। সিদ্ধান্ত হয়, বিকেল সাড়ে ৪টেয় ফের একবার বসা হবে বৈঠকে।
বিকেলে বৈঠক বসেও ছিল ঠিকই, কিন্তু সেদিন আর হাজির হননি নাড্ডা ও রিজিজু। তাঁদের অনুপস্থিতির কোনও কারণ জানানো হয়নি ধনখড়কে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর সেই বৈঠক বাতিল করে দিতে হয়। এরপর ঘোষণা করা হয়, পরবর্তী বৈঠক হবে মঙ্গলবার দুপুর ১টায়। কিন্তু সবকিছু তছনছ করে দেয় রাত ৯টার পর ধনখড়ের ইস্তফা পত্র।
বিরোধীদের দাবি, এর পেছনে রয়েছে একাধিক চাপা বিস্ফোরণ। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ ইঙ্গিত দেন, দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টার মধ্যে কিছু “অসাধারণ” ঘটনা ঘটে গেছে। তাঁর মতে, ঘটনাটি ‘শারীরিক অসুস্থতা’র চেয়েও অনেক গভীর এবং রাজনৈতিক।
তবে জল্পনা আরও বাড়ায় একটি বিশেষ বিষয়—ধনখড়ের ভূমিকা বিচারব্যবস্থার প্রসঙ্গে। সূত্র বলছে, বিচারপতি ভার্মারের বিরুদ্ধে বিরোধীদের তরফে আনা অনাস্থা প্রস্তাব গ্রহণ করেই নাকি তৈরি হয় রাজনৈতিক বিপর্যয়। ধনখড় নিজের ক্ষমতার ভিত্তিতে ৫০ জন বিরোধী সাংসদের স্বাক্ষর সহ সেই প্রস্তাব গৃহীত করেন, কিন্তু সে বিষয়ে কোনওরকম পূর্ব আলোচনা করেননি সরকার পক্ষের সঙ্গে। অথচ সরকারের পরিকল্পনা ছিল, সর্বসম্মতভাবে, নিজের উদ্যোগে প্রথমে লোকসভায় ও পরে রাজ্যসভায় এই প্রস্তাব আনা হবে। ধনখড় সেই পরিকল্পনার বাইরে গিয়ে কাজ করায় গভীর অস্বস্তিতে পড়ে যায় সরকার।
এছাড়াও, রাজ্যসভায় পহেলগাম এবং অপারেশন সিঁদুর ইস্যুতে বিরোধী নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গেকে দীর্ঘ সময় ধরে বক্তব্য রাখার সুযোগ দেওয়াও নাকি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অসন্তোষ বাড়িয়েছে ধনখড়ের বিরুদ্ধে।
সব মিলিয়ে, ধনখড়ের পদত্যাগের কারণ আদৌ স্বাস্থ্যগত, না কি রাজনৈতিক চাপ ও সংঘাতের ফল, তা নিয়ে এখন জোর চর্চা চলছে দিল্লির রাজনৈতিক মহলে। তবে এই বিষয়ে এখনও পর্যন্ত ধনখড়ের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।