Shopping cart

TnewsTnews
  • Home
  • দেশ
  • গুলিতে এক চোখ হারিয়েছেন, মুখের হাড় ভাঙা… সেই আইএএস অফিসারকে এবার সরিয়ে দিল সরকার
দেশ

গুলিতে এক চোখ হারিয়েছেন, মুখের হাড় ভাঙা… সেই আইএএস অফিসারকে এবার সরিয়ে দিল সরকার

IPS Officer
Email :3

মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বদলি হলেন আইএএস অফিসার (IPS Officer) রিঙ্কু সিং রাহি। উত্তরপ্রদেশের শাহজাহানপুর জেলার পুয়ায়ন-এ এসডিএম হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই এক অনন্য ঘটনা তাঁকে জাতীয় আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এল (IPS Officer)। প্রশাসনিক দায়িত্বে নিজের প্রথম দিনেই একখানা ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়—যেখানে তাঁকে কানে ধরে ওঠবস করতে দেখা যায়, প্রতিবাদরত আইনজীবীদের সামনে। ভাইরাল হওয়া মাত্রই, মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, এসডিএম রাহিকে সরিয়ে দেওয়া হবে। তাঁকে বদলি করে পাঠানো হয় লখনউয়ের বোর্ড অফ রেভিনিউ-তে (IPS Officer)।

পুরো ঘটনাটি ঘটে ২৯ জুলাই, দুপুর ২টোর কিছু পর, যখন রাহি দায়িত্ব গ্রহণ করে প্রথমে তহসিল প্রাঙ্গণ পরিদর্শনে বেরোন। সেই সময় তিনি দেখতে পান, আইনজীবী অজ্ঞানরামের কেরানি বিজয় (বয়স ৩৮) তহসিল ভবনের দেয়ালে দাঁড়িয়ে মূত্রত্যাগ করছেন। অফিসের এমন অশোভন আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে এসডিএম রাহি তাঁকে ভর্ৎসনা করেন এবং পরিষ্কারভাবে বলেন, শৌচাগার ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু পালটা উত্তর আসে—“টয়লেট এত নোংরা, ব্যবহার করা যায় না।” এরপর রাহি তাঁকে শাস্তি স্বরূপ কানে ধরে ওঠবস করান (IPS Officer)।

তবে এখানেই থেমে থাকেনি ঘটনা। তহসিলের বাইরে ইতিমধ্যে চলছিল আইনজীবীদের একটি ধরনা। খবর পেয়ে তাঁরা রাহির কাছে এসে বলেন, প্রশাসন নিজে টয়লেটের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে ব্যর্থ, আর সেই দায়ে কেন কেরানিকে শাস্তি দেওয়া হবে? উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে আইনজীবীরা রাহিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বলেন, “আপনি যদি এতটা নীতিনিষ্ঠ হন, তবে আপনিও একই শাস্তি দিন নিজের ওপর।” বিস্ময়ের সঙ্গে দেখা যায়, রাহি তা স্বেচ্ছায় মেনে নেন (IPS Officer)।

আইএএস অফিসার রাহি (IPS Officer) সবার সামনে কানে ধরে পাঁচবার ওঠবস করেন এবং বলেন, “আমার ভুল মানতে লজ্জা নেই। আমি নিজেও কখনও প্রকাশ্যে প্রস্রাব করব না। এই শৌচালয়ের অবস্থা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক, এটি প্রশাসনেরই ব্যর্থতা। আমি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করব।”

এই ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। কেউ রাহির সততা ও নম্রতার প্রশংসা করেন, কেউ আবার বলেন প্রশাসনিক মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়েছে। রাত পোহাতেই আসে বদলির নির্দেশ। শাহজাহানপুরের এডিএম রাজনীত মিশ্র জানান, “আইনজীবীদের সঙ্গে ঘটনাটি নিয়ে আলোচনা চলছে। ADM Judicial রাশিদ আলি খান উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলছেন। আলোচনা শেষেই পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক হবে।”

এই ঘটনাটি যেন আরেকবার তুলে ধরল রিঙ্কু সিং রাহির জীবনসংগ্রামের প্রেক্ষাপট। হাথরাসে জন্ম, সরকারি স্কুলে পড়াশোনা, জামশেদপুর থেকে বৃত্তির টাকায় বি.টেক সম্পূর্ণ করে, ২০০৪ সালে ইউপি পিসিএস পরীক্ষায় সফল হয়ে ২০০৮ সালে মুজফ্ফরনগরে জেলা সমাজকল্যাণ আধিকারিক হিসেবে যোগ দেন। সেখানেই একশো কোটির বৃত্তি ও পেনশন দুর্নীতি ফাঁস করে ফেলেন তিনি।

২০০৯ সালের ২৬ মার্চ, এই সততার মূল্য দিতে হয় গুলির আঘাতে। ব্যাডমিন্টন খেলছিলেন সহকর্মীর সঙ্গে, তখনই দুই আততায়ী তাঁকে লক্ষ্য করে সাত রাউন্ড গুলি চালায়। তাঁর মুখের হাড় গুঁড়িয়ে যায়, একটি চোখের দৃষ্টি হারান, এক কান বধির হয়ে যান, মুখে স্থায়ী বিকৃতি তৈরি হয়। মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেও থেমে যাননি তিনি। তথ্য জানার অধিকার আইনে (RTI) লাগাতার আবেদন করেন, একসময় আন্দোলনে বসেন। ২০১২ সালে লখনউতে অনশন করার সময় তাঁকে জোর করে মানসিক হাসপাতালে পাঠানো হয়, দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

২০২১ সালে ৪০ বছর বয়সে UPSC সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় বসেন তিনি, প্রতিবন্ধী কোটায় ৬৮৩তম স্থান পান এবং ২০২২ ব্যাচে আইএএস হন।

ঘটনার পর, নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রাহি বলেন, “ক্লার্ক প্রকাশ্যে বলছিল, সে টয়লেট ব্যবহার করবে না। আমি তাকে শিক্ষার জন্য ওঠবস করালাম। কিন্তু যখন আইনজীবীরা আমায় বলল, তুমিও করো—আমি করলাম। তাতে কোনও লজ্জা নেই। কিন্তু আসল শাস্তি কী জানেন? এই দেশের একজন দলিত হয়ে বাঁচা, সেটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Posts