পহেলগাঁওয়ে ২২ এপ্রিলের জঙ্গি হামলার পরে ভারত সিন্ধু জল চুক্তি (Indus Water treaty)-তে অংশগ্রহণ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে পাকিস্তান এখনও পর্যন্ত চারটি চিঠি পাঠিয়েছে ভারতের কাছে। তারা বারবার ভারতকে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়েছে।
জলশক্তি মন্ত্রকের সচিব দেবশ্রী মুখার্জি পাকিস্তানের জলসম্পদ সচিব সৈয়দ আলি মুর্তাজাকে যে চিঠি দেন, তাতে স্পষ্ট করে জানানো হয়—ভারত এখনও পাকিস্তান থেকে আসা সীমান্তপারের সন্ত্রাসবাদের শিকার। এই প্রসঙ্গেই, পাশাপাশি কিছু কারিগরি যুক্তি তুলে ধরে, ভারত চুক্তিতে (Indus water treaty) অংশগ্রহণ স্থগিত করার কথা জানায়।
ভারতের বক্তব্য, পাকিস্তান এই চুক্তির (Indus water treaty) মূল ভিত্তি—পারস্পরিক আস্থা ও সহযোগিতার মনোভাব—ব্যহত করেছে। পাকিস্তান প্রথম চিঠি পাঠায় মে মাসের শুরুতে, অর্থাৎ ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর আগেই। এরপর আরও তিনবার অনুরোধ জানায় পাকিস্তান।
সব চিঠিই জলশক্তি মন্ত্রকের মাধ্যমে বিদেশ মন্ত্রকে পাঠানো হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
পহেলগাঁও হামলার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ফের স্পষ্ট ভাষায় জানান—”ব্যবসা ও সন্ত্রাস, জল ও রক্ত, গুলি ও আলোচনার একসঙ্গে চলা সম্ভব নয়।”
এই ঘটনার পর ভারত দ্রুত সিন্ধু নদী সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ জল প্রকল্পগুলির কাজ শুরু করেছে। এর মধ্যে অন্যতম একটি ১৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ খাল, যা বিয়াস নদীকে গঙ্গা খালের সঙ্গে যুক্ত করবে এবং পরে যমুনা পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হবে। প্রায় ২০০ কিলোমিটারের এই প্রকল্পে থাকবে ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সুড়ঙ্গ, যা গঙ্গাসাগর পর্যন্ত যমুনার জল পৌঁছে দিতে সাহায্য করতে পারে।
এই প্রকল্পের সুবিধা পাবে দিল্লি, হরিয়ানা, পঞ্জাব এবং রাজস্থান। সরকার জানিয়েছে, কাজ দ্রুত গতিতে চলছে এবং আগামী ২-৩ বছরের মধ্যেই তা শেষ হবে। বর্তমানে বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট (DPR) তৈরির কাজও চলছে।
সূত্রের মতে, এই চুক্তি স্থগিত (Indus water treaty) রাখলে পাকিস্তানের রবি ফসল চাষ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তবে খরিফ মৌসুমে তার প্রভাব তুলনামূলকভাবে কম পড়বে। কৃষির বাইরেও সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে জলের সংকট দেখা দিতে পারে।
পাকিস্তান ইতিমধ্যেই বিশ্বব্যাঙ্কের কাছে হস্তক্ষেপের আবেদন করেছে। তবে বিশ্বব্যাঙ্ক জানিয়েছে, ভারতের অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্তে তারা হস্তক্ষেপ করবে না।
ভারতের দাবি, ১৯৫০-৬০ দশকের চুক্তিটি এখনকার সময়ে আর উপযুক্ত নয়। কারণ জলবায়ুর পরিবর্তন, হিমবাহ গলে যাওয়া, জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও টেকসই জলের ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনে এই চুক্তি নবনির্মাণ করা দরকার।
যদিও ভারত নতুন করে চুক্তি আলোচনায় বসার আহ্বান জানালেও, পাকিস্তান এখনও তাতে রাজি হয়নি। ভারতীয় আধিকারিকদের মতে, এটাই চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করার শামিল।
পহেলগাঁও হামলার পর ভারত শুধু কূটনৈতিকভাবে নয়, কৌশলগতভাবেও একাধিক জবাব দিচ্ছে—যার মধ্যে IWT-তে অংশগ্রহণ স্থগিত রাখাও অন্যতম পদক্ষেপ।