ভারত থেকে অবৈধ বাংলাদেশি (Bangladesh) অনুপ্রবেশকারীদের ফেরত পাঠানো নিয়ে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের (Bangladesh) রাজনৈতিক নেতারা একে দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর ‘আক্রমণ’ ও নিরাপত্তার জন্য ‘বিপজ্জনক’ বলছেন। মঙ্গলবার ভারত ৬৭ জন বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠিয়েছে, এবং বুধবার সকালে আরও ১৩ জনকে দুই দেশের সীমান্তের ‘জিরো লাইনে’ আটকে থাকতে দেখা গেছে।
২৬ মে, বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর (Bangladesh) একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ভারতের এই ‘পুশ-ইন’ নীতি গ্রহণযোগ্য নয় এবং প্রয়োজনে সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করবে।
২০১৬ সালে ভারতের তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু সংসদে জানান, ভারতে আনুমানিক ২ কোটির বেশি অবৈধ বাংলাদেশি বসবাস করছেন। চলতি বছর ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় ১০০ জন অনুপ্রবেশকারীকে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ, বাংলাদেশের বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর হাতে তুলে দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ‘নিউ এইজ’-এর দাবি, ৭ মে থেকে এ পর্যন্ত ৮০০ জনের বেশি ব্যক্তিকে ‘জোর করে’ বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে।
বুধবার সকালে লালমনিরহাটের ছয়টি সীমান্ত পয়েন্টে বিএসএফ ৫৭ জনকে ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে বিজিবি এবং স্থানীয়রা তা ঠেকিয়ে দেয় বলে জানায় ‘ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশ’। ভারতের কোচবিহার জেলার বিপরীতে পড়ে এই এলাকা।
‘ডেইলি স্টার’ জানিয়েছে, ১৩ জন মানুষ — যাঁদের মধ্যে শিশু ও মহিলা রয়েছেন — সীমান্তের জিরো লাইনে আটকে রয়েছেন, তাঁদের বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না, আবার ভারতেও ফিরতে পারছেন না।
বিজিবির লালমনিরহাট ব্যাটালিয়নের কমান্ডার আব্দুস সালাম জানান, বিএসএফের সঙ্গে পতাকা বৈঠকের অনুরোধ করা হলেও তারা সাড়া দেয়নি। স্থানীয় নেতারা জানিয়েছেন, তারা বিজিবির পাশে আছেন এবং জোর করে কাউকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া হবে না।
এছাড়া ভারত সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া বসানোর চেষ্টাও প্রতিহত করেছে বিজিবি। এ বছরের জানুয়ারিতেও বিএসএফ ও বিজিবির মধ্যে এ নিয়ে উত্তেজনা দেখা দেয়।
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ৪০৯৬.৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানায়, তার মধ্যে ৩২৩২ কিলোমিটার সীমান্ত ইতিমধ্যেই ঘেরা হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম (অবসরপ্রাপ্ত) ১৮ মে বলেন, যদি কোনো বাংলাদেশি অবৈধভাবে ভারতে থাকে, তাহলে তাঁদের ফিরিয়ে আনা উচিত — তবে সেটি যেন যথাযথ কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হয়।
তবে রাজনৈতিক বাস্তবতা ভিন্ন। ২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতা হারানোর পর ঢাকায় ভারত-বিরোধী শক্তির উত্থান ঘটেছে। অনেকে মনে করছেন, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতেই ভারত হস্তক্ষেপ করেছিল, এবং এখন সেই রাগই নীতি নির্ধারণে প্রভাব ফেলছে।
‘ন্যাশনাল সিটি পার্টি’র নেতা সারওয়ার তুষার বলেন, “ভারত যদি এভাবে লোক ঢুকিয়ে দেয়, তাহলে তা সরাসরি আমাদের নিরাপত্তায় হুমকি তৈরি করে। এটি আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন এবং একেবারেই উসকানিমূলক।”
২৬ মে, বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর মোদ-এর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজিম-উদ-দৌলা বলেন, “বিজিবি বিষয়টি ভালোভাবে সামলাচ্ছে, তবে প্রয়োজনে সেনাবাহিনী প্রস্তুত আছে।”
এর আগে ৯ মে, বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রক ভারতকে অনুরোধ করে যেন তারা পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া মেনে চলে।
অন্যদিকে, অবৈধ অভিবাসন ভারতের নিরাপত্তার বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজস্থান, গুজরাট এবং আসামের মতো রাজ্যগুলোতে এই অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে আটক করা হচ্ছে।
অসম ও পশ্চিমবঙ্গে জনসংখ্যা পরিবর্তন এবং সম্প্রতি মুর্শিদাবাদের দাঙ্গার পেছনেও এই অবৈধ অভিবাসীদের বড় ভূমিকা রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ভারতের কাছে যেমন এটি একটি সার্বভৌম সিদ্ধান্ত, তেমনই বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়ায় বিষয়টি আরও রাজনৈতিক রূপ নিচ্ছে।