পাঞ্জাবের জলন্ধর-পাঠানকোট হাইওয়েতে এক ভয়াবহ পথ দুর্ঘটনায় প্রয়াত হলেন বিশ্বের অন্যতম প্রবীণ ম্যারাথন রানার, ১১৪ বছর বয়সি ফৌজা সিং (FouZa Singh)। সোমবার রাতে ঘটে যাওয়া এই মর্মান্তিক ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে গোটা ক্রীড়া দুনিয়ায়। পরিচিত ‘টার্বানড টর্নেডো’ নামে, ফৌজা সিং(FouZa Singh) শুধু দৌড়বিদ ছিলেন না, ছিলেন এক জীবন্ত অনুপ্রেরণা। ৮৯ বছর বয়সে প্রথমবার ম্যারাথনে নামার সাহস দেখিয়েছিলেন তিনি, এবং মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্তও নিজের পায়ে দিব্যি হাঁটাচলা করছিলেন।
জানা গেছে, আচমকাই একটি দ্রুতগামী গাড়ি এসে ধাক্কা মারে ফৌজাকে (FouZa Singh)। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও শেষরক্ষা হয়নি। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত গাড়িচালক ৩০ বছর বয়সি প্রবাসী ভারতীয় অমৃতপাল সিং ধিলোঁকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে জলন্ধরের দাসুপুর থেকে তাকে হেফাজতে নেয় পুলিশ এবং বর্তমানে তাকে ভোগপুর থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বুধবার অমৃতপালকে আদালতে তোলা হবে।
তদন্তে নেমে পুলিশ প্রথমে দুর্ঘটনার সময় রাস্তায় থাকা গাড়িগুলোর তালিকা তৈরি করে। সেই সূত্র ধরেই সন্ধান মেলে একটি ফরচুনার এসইউভি-র, যা রেজিস্টার ছিল কাপুরথালার বাসিন্দা ভারিন্দর সিংয়ের নামে। জিজ্ঞাসাবাদের পর তিনি জানান, গাড়িটি তিনি দু’বছর আগে বিক্রি করেছিলেন অমৃতপালকে। জানা গিয়েছে, কিছুদিন আগে কানাডা থেকে ভারতে ফিরেছেন অমৃতপাল (FouZa Singh)।
পুলিশ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনার পর অমৃতপাল গাড়ি নিয়ে জলন্ধরে না ঢুকে বিভিন্ন গ্রামের ভিতর দিয়ে নিজের বাড়িতে পালিয়ে যান (FouZa Singh)। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেছেন যে, একটি বৃদ্ধ মানুষকে তিনি ধাক্কা দিয়েছিলেন, তবে তিনি জানতেন না সেটি ছিলেন কিংবদন্তি ফৌজা সিং।
১৯১১ সালের ১ এপ্রিল পাঞ্জাবের জলন্ধরে জন্ম ফৌজার। ২০০০ সালে প্রথমবার লন্ডন ম্যারাথনে দৌড়ান। এরপর দেশের হয়ে বহু আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন তিনি। ৪২ কিলোমিটার ম্যারাথনে অংশ নিয়ে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন বহু দেশে। শুধু তাই নয়, ২০০৪ সালের আথেন্স এবং ২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিকের মশালবাহক হিসেবেও তাঁকে দেখা যায়। জীবনের শতবর্ষ পেরিয়েও সমাজকল্যাণমূলক কাজে সক্রিয় ছিলেন ফৌজা। ১০২ বছর বয়সে প্রতিযোগিতামূলক দৌড় থেকে অবসর নিলেও থেমে যাননি। ব্রিটিশ ফুটবল তারকা ডেভিড বেকহ্যাম এবং কিংবদন্তি বক্সার মহম্মদ আলির সঙ্গে বিজ্ঞাপনেও দেখা গিয়েছে তাঁকে।
এই দুর্ভাগ্যজনক দুর্ঘটনায় ভারত এক মহীরুহকে হারাল। যিনি বয়সকে শুধুই একটি সংখ্যা প্রমাণ করেছিলেন বারবার।
