Shopping cart

TnewsTnews
  • Home
  • ভালো খবর
  • এক নারীর হাতে ২০০০+ বিলুপ্তপ্রায় গাছের জীবন ফিরে পেল বন! গুরুকুলা বনাঞ্চলের এই গল্প জানলে চোখে জল আসবে
দেশ

এক নারীর হাতে ২০০০+ বিলুপ্তপ্রায় গাছের জীবন ফিরে পেল বন! গুরুকুলা বনাঞ্চলের এই গল্প জানলে চোখে জল আসবে

forest woman
Email :3

পশ্চিমঘাটের বুকে এক নারী বনযোদ্ধার লড়াই—ঘূর্ণিঝড়ের পরে গাছ ভাঙলেও বেঁচে ছিল এক অর্কিড! যে বনকে অনেকেই দেখে শুধু ‘কার্বন সিঙ্ক’, সেখানে তিনি দেখেন ‘ভালোবাসার ঠিকানা’।

ভোরবেলা এক ঘূর্ণিঝড় বয়ে গিয়েছিল। ঝড় থেমে যাওয়ার পর ৫৬ বছরের লালী জোসেফ হাঁটছিলেন সেই বনপথে, যেটা তিনি (Forest Woman) নিজের জীবন দিয়ে আগলে রেখেছেন। আশেপাশে শুধু ভাঙা গাছের ডাল, উপড়ে পড়া লতাপাতা, বন যেন একটু কেঁদে নিয়েছে। এমন সময় এক ভাঙা ডালে চোখ পড়ে লালীর—একটি অর্কিড এখনও আঁকড়ে রয়েছে। প্রাণ আছে, টিকে আছে। লালী ধীরে ধীরে তাকে সরিয়ে নেন, ভালো করে বেঁধে দেন একটি দাঁড়িয়ে থাকা গাছে। একটুকরো ভালোবাসা বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা।

এমন দৃশ্য গুরুকুলা বোটানিকাল স্যাংচুয়ারিতে প্রায়ই ঘটে (Forest Woman) । কেরালার উত্তরের পশ্চিমঘাট পর্বতমালার কোলে এই আশ্চর্য বন যেন এক নীরব বিপ্লবের নাম, যেখানে নারীদের (Forest Woman) নিঃশব্দ লড়াই প্রতিদিন গড়ে তুলছে এক জীবন্ত বনভবিষ্যৎ।

এই নারীরা (Forest Woman) বনকে শুধুমাত্র গাছপালা হিসেবে দেখেন না, তারা দেখেন স্মৃতি, আশ্রয়, প্রেম—একটা ঘর, যেটাকে রক্ষা করা দরকার। এই বন প্রকৃতপক্ষে হয়ে উঠেছে এমন এক “নোয়া’স আর্ক”, যেখানে বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদের জন্য তৈরি হয়েছে দ্বিতীয় জন্মের জায়গা।

কিভাবে শুরু হয়েছিল এই বনরক্ষা মিশন?
১৯৮১ সালে জার্মান উদ্ভিদপ্রেমী ভল্ফগ্যাং থিউয়ারকাউফ কেরালার এক আধ্যাত্মিক গুরু থেকে উপহার পান তিন হেক্টর প্রাচীন বনভূমি (Forest Woman) । চারপাশে তখন বন কেটে বানানো হচ্ছিল চা, আদা আর লেমনগ্রাসের চাষ। চোখের সামনে বন হারাতে দেখে থিউয়ারকাউফ সিদ্ধান্ত নেন—এই ধ্বংসের বিরুদ্ধে তিনি দাঁড়াবেন। হাতে তুলে নেন হারিয়ে যাওয়া গাছেদের, বাঁচানোর জন্য শুরু করেন এই অভয়ারণ্য। ধীরে ধীরে এই উদ্যোগ পরিণত হয় একটি বিশাল বনসংরক্ষণ প্রকল্পে।

আজ গুরুকুলা বোটানিকাল স্যাংচুয়ারি ৩২ হেক্টর জুড়ে বিস্তৃত (Forest Woman) । ২০০০টিরও বেশি প্রজাতির স্থানীয় গাছ রয়েছে এখানে। পশ্চিমঘাটে যত উদ্ভিদ পাওয়া যায়, তার প্রায় ৪০ শতাংশ রয়েছে এই বনেই!

যে নারীরা বনকে নিজের মতো ভালোবেসে বাঁচান
থিউয়ারকাউফ প্রয়াত হন ২০১৪ সালে (Forest Woman) । তার আগে তিনি তৈরি করে যান এক নারী-নেতৃত্বাধীন টিম, যাঁরা আজও বনকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। এই নারীরা পিএইচডি ধারী গবেষক নন, এঁরা শিখেছেন গাছ ছুঁয়ে, পাতার নড়াচড়া দেখে, মাটির গন্ধ শুঁকে। তাদের একমাত্র উপকরণ—সময়, মনোযোগ আর ভালোবাসা v।

লালী জোসেফ (Forest Woman) তখন ১৯ বছরের তরুণী, এক্স-রে টেকনিশিয়ান হওয়ার প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন। কাজ দরকার ছিল, গাছ ভাল লাগত, তাই যোগ দেন। ৩৭ বছর পর, আজ তিনিই এই বন সংরক্ষণের প্রধান মুখ।

এখানে শিক্ষার কোনও শ্রেণীকক্ষ নেই। ভুল করে শিখে নেওয়া, আবার চেষ্টা করা—এই ভাবেই তারা হয়ে উঠেছেন অর্কিড, ইম্প্যাশেন্স, ফার্ন, লিভারওয়ার্টস-এর মতো সংবেদনশীল গাছেদের রক্ষক। বহু গাছ যেগুলি প্রাকৃতিক পরিবেশ ছাড়া বাঁচে না, এখানে তারা ফের মাথা তুলেছে।

কেন এত গুরুত্বপূর্ণ এই বনভূমি?
পশ্চিমঘাট পর্বতমালা পৃথিবীর সবচেয়ে জৈববৈচিত্র্যপূর্ণ এলাকাগুলোর একটি (Forest Woman) । ২৭ শতাংশ ভারতীয় গাছগাছড়া এখানেই। এখানকার নদী-উপনদীগুলো দক্ষিণ ভারতের প্রায় ২৪৫ মিলিয়ন মানুষের জীবন জলের উৎস। অথচ মাত্র ৭ শতাংশ প্রাচীন বনভূমি বেঁচে আছে।

এই সংকটের মাঝেও গুরুকুলা যেন আশার আলো—যেখানে শুধু গাছ নয়, পুরো বনবাস ফেরানোর কাজ হচ্ছে (Forest Woman) ।

গাছ নয়, বন ফিরিয়ে দিচ্ছেন তাঁরা
গুরুকুলার নারীরা (Forest Woman) শুধু গাছ লাগান না। তাঁরা লতা, শিকড়, টব, ফার্ন, পাতাঝরা গাছ—সব কিছু মিলে একটা আস্ত বাস্তুতন্ত্র ফিরিয়ে দেন। যত্ন দিয়ে একে একে ফেরান সবুজ বন্ধুকে। এখানেই তৈরি হয়েছে একেকটা ‘মিনি বন’, যা শুধু বেঁচে নেই—ফিরিয়ে দিচ্ছে প্রাণ।

এই যত্নের ফসল?
দেখা যাচ্ছে প্রাণীদের প্রত্যাবর্তন।

ফিরেছে ২৪০ রকম পাখি, ২৫ প্রজাতির উভচর, ২০ ধরনের সাপ, ৬৫টিরও বেশি প্রজাপতি, হরিণ, গৌর, হাতি—এমনকি দেখা মিলেছে বাঘের পায়ের ছাপও।

এক নারীর (Forest Woman) হাতে গড়ে ওঠা এই বন আজ এক আশ্চর্য কীর্তি।
লালী জোসেফ, যিনি একসময় চাকরির প্রয়োজনে বনে এসেছিলেন, আজ তিনি স্বীকৃত উদ্ভিদ সংরক্ষণবিদ। তার লেখা সাতটি বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে।

এভাবেই এক নীরব নেতৃত্ব গড়ে ওঠে—শিকড়ের মতো, মাটির নিচে, সময় নিয়ে।

এই তো প্রকৃত যত্ন
“বন মানে শুধু গাছ নয়,” বলছেন শিক্ষিকা সুপ্রভা শেশন, “পশ্চিমঘাটে ৬০০০ ফুলগাছ, হাজারো ছত্রাক, শত শত স্তন্যপায়ী প্রাণী আছে।”

তিনি আরও বলেন, “প্রকৃতি ফিরে আসতে চায়। শুধু আমাদের থামতে হবে ধ্বংসের সেই পথ থেকে।”

যখন গোটা বিশ্বে বন পুনরুদ্ধার মানে দ্রুত ফলাফল, সেখানে গুরুকুলা দেখিয়ে দিয়েছে, প্রকৃত যত্ন মানে সময় দেওয়া। যত্ন মানে বর্ষায় নার্সারি আগলে রাখা, মানে একটি ভাঙা ডালে টিকে থাকা অর্কিডকে নতুন জীবনের সুযোগ দেওয়া।

Related Tag:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Posts