এক ব্যবসায়ী পরিবারে জন্ম, বিলাসবহুল জীবন, ফরাসি শিক্ষাগত যোগ্যতার দাবি—সবই ছিল হর্ষবর্ধন জৈনের পরিচয়ের অংশ (Fake Embassy Racket)। কিন্তু এই পরিচয়ের আড়ালেই লুকিয়ে ছিল এক অভিনব প্রতারণার সাম্রাজ্য। এমনই এক সাম্রাজ্য, যেখানে তিনি নিজেকে ঘোষণা করেছিলেন কাল্পনিক দেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে, গাড়িতে ছিল ভুয়ো কূটনৈতিক নম্বরপ্লেট, আর গাজিয়াবাদের কবি নগরের অভিজাত এলাকার এক ভাড়া নেওয়া বাংলোতে চলছিল ‘Embassy of Westarctica’—একটি দেশের দূতাবাস (Fake Embassy Racket), যে দেশ আদৌ কোনও আন্তর্জাতিক মানচিত্রে নেই!
৪৭ বছর বয়সি হর্ষবর্ধন জৈনের এই অভিনব প্রতারণা মঙ্গলবার রাতে ভেঙে পড়ে, যখন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে উত্তরপ্রদেশ স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (STF) তার বাংলোতে হানা দেয় এবং তাকে গ্রেফতার করে। এরপরেই এক চমকপ্রদ জাল জগতের পর্দা খুলে যায়—যেখানে ভুয়ো পরিচয়, নকল কাগজপত্র, হাওয়ালার অর্থের লেনদেন, মোর্ফ করা ছবি, বিদেশি পতাকা, কনভয় স্টাইল চলাফেরা—সব মিলে তৈরি হয়েছিল এক মিথ্যের সাম্রাজ্য (Fake Embassy Racket)।
স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, “লোকটা এতটাই বিশ্বাসযোগ্য ছিল যে কিছু বোঝা যায়নি। দামি জামাকাপড়, ঘড়ি, বিদেশি নম্বরপ্লেট—সব ছিল। আমরা ভাবতাম সত্যিই কোনও বড় দূত!”
হর্ষবর্ধন নিজেকে দাবি করত ভুয়ো দেশ যেমন Westarctica, Seborga, Poulvia, ও Lodonia-র রাষ্ট্রদূত বা কূটনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে (Fake Embassy Racket)। ওই বাংলোতেই সে বানিয়েছিল এক ‘দূতাবাস’, যেখানে ছিল নামফলক, অফিসের আসবাব, বিদেশি পতাকা—সব কিছুই যেন কোনও আসল বিদেশি মিশন (Fake Embassy Racket)।
তবে শুধু সাজানো বাংলো নয়, হর্ষবর্ধনের আরও বড় শক্তি ছিল তার ‘প্রভাব’। জানা গেছে, দিল্লির একাধিক মন্ত্রকে ছিল তার অবাধ যাতায়াত। এমনকি সে নিজেকে এতটাই বিশ্বাসযোগ্যভাবে তুলে ধরেছিল যে মন্ত্রকের নিরাপত্তারক্ষীরাও কখনও প্রশ্ন করত না। ATS সূত্রে খবর (Fake Embassy Racket), “কখনও কখনও পুরো কনভয় নিয়েও ঢুকে পড়ত, একেবারে আসল কূটনীতিকের মতো।”
STF তদন্তে উঠে এসেছে, এই ভুয়ো দূত একাধিক নথি জাল করেছে, বানিয়েছে দুইটি ভুয়ো প্রেস কার্ড, তৈরি করেছে ফেক রাবার স্ট্যাম্প, এমনকি প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ নেতাদের সঙ্গে মোর্ফ করা ছবিও ব্যবহার করত বিশ্বাসযোগ্যতা দেখাতে।
বিশেষ টাস্ক ফোর্সের এসএসপি সুশীল ঘুলে জানান, “এই ব্যক্তি নিজেই নিজের চারপাশে এমন এক গ্রহণযোগ্যতার বলয় তৈরি করেছিল, যা সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, অনেক আধিকারিকেরও চোখে ধুলো দিতে সক্ষম হয়েছিল।”
বর্তমানে হার্শবর্ধনের বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতি, জাল নথি তৈরি ও মানি লন্ডারিংয়ের ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। তার বাংলো থেকে উদ্ধার হয়েছে উপগ্রহ ফোন, একাধিক বিলাসবহুল গাড়ি, বিদেশি পতাকা ও ভুয়ো নথিপত্র।