সুপ্রিম কোর্টের সুস্পষ্ট পরামর্শ মানতে নারাজ দেশের নির্বাচন কমিশন (Election Commission)। বিহারে ভোটার সমীক্ষা সংক্রান্ত এক মামলার প্রেক্ষিতে গত ১০ই জুলাই শীর্ষ আদালতে বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চ নির্বাচন কমিশনকে পরামর্শ দিয়েছিল, আধার কার্ড, রেশন কার্ড এবং ভোটার কার্ড—এই তিনটি নথিকে নাগরিকদের পরিচয়পত্র হিসাবে স্বীকৃতি দিতে। কিন্তু দিন দশেক পর সেই পরামর্শের বিরোধিতা করে একটি হলফনামা সুপ্রিম কোর্টে জমা দিল কমিশন (Election Commission)।
হলফনামায় নির্বাচন কমিশন (Election Commission) স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, সংশোধিত ভোটার তালিকায় নতুন করে নাম তোলার ক্ষেত্রে বা নাগরিকত্ব যাচাইয়ের কাজে আধার, রেশন কার্ড কিংবা ভোটার কার্ড—কোনোটিকেই প্রমাণ হিসেবে গণ্য করা হবে না। কমিশনের যুক্তি, ভোটার তালিকা সংশোধনের সময় নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, এবং এটি নির্ধারণের সাংবিধানিক অধিকার একমাত্র নির্বাচন কমিশনের (Election Commission) হাতেই ন্যস্ত।
তবে কমিশন (Election Commission) আরও জানিয়েছে, কেউ যদি ভোটার তালিকায় নাম না পান, তাহলেও তার নাগরিকত্ব খারিজ হয়ে যাবে এমন নয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, আধার, রেশন এবং ভোটার কার্ডের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরিচয়পত্রগুলিকে কেন মান্যতা দিতে রাজি নয় কমিশন?
এই প্রসঙ্গে কমিশনের জবাব, দেশে বিপুল সংখ্যক ভুয়ো রেশন কার্ড রয়েছে এবং সেগুলোর বেশিরভাগই তৈরি হয়েছে আধার কার্ডের সহায়তায়। অর্থাৎ, আধার নিজেই প্রশ্নবিদ্ধ। তাই এর ভিত্তিতে নাগরিকত্ব যাচাই করা সম্ভব নয় বলেই মনে করছে নির্বাচন কমিশন।
ভোটার কার্ড নিয়েও কমিশনের আপত্তি রয়েছে। তারা বলেছে, একজন নাগরিকের হাতে ভোটার কার্ড থাকলেই তিনি বৈধ ভোটার, এমনটা ধরে নেওয়া যায় না। কমিশনের মতে, ভোটার কার্ড কেবলমাত্র একজন ব্যক্তি নির্বাচন ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত, এই তথ্যটাই জানায়। কিন্তু তিনি কীভাবে ভোটার হয়েছেন—আইনসঙ্গত পথে, নাকি কোনও ভুল বা জালিয়াতির মাধ্যমে—এই প্রশ্নের উত্তর ভোটার কার্ড দিতে পারে না। তাই একে প্রমাণপত্র হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না।
কমিশনের এই অবস্থানকে ঘিরে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক ও নাগরিক মহলে বিতর্ক শুরু হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট কোন পথে এগোয়, তা দেখার অপেক্ষায় গোটা দেশ।