লখনউয়ের উপকণ্ঠের মুটক্কিপুর গ্রামের টাকওয়া কলোনিতে এখন অদ্ভুত নীরবতা (Delhi Blast)। যেন গোটা এলাকাই এক মুহূর্তে থমকে গেছে। কারণ, দিল্লির লালকেল্লার কাছে ভয়াবহ গাড়িবিস্ফোরণ মামলার তদন্তে উঠে এসেছে এখানকার বাসিন্দা পারভেজ আনসারির নাম—যিনি ডাঃ শাহিনের ভাই (Delhi Blast)। শাহিনকে গ্রেফতারের পর থেকেই পারভেজকে জইশ-ই-মহম্মদ-যুক্ত ফরিদাবাদ টেরর মডিউলের সঙ্গে জড়িয়ে দেখা হচ্ছে। আর সেই খবর ছড়িয়ে পড়তেই আতঙ্কে ঘরবন্দি হয়ে গেছেন তাঁর প্রতিবেশীরা।
মঙ্গলবার রাত থেকেই টাকওয়া কলোনিতে পুলিশ, এটিএস এবং জম্মু–কাশ্মীর পুলিশের টানা তল্লাশি। এরপর থেকেই অধিকাংশ বাড়ি বন্ধ (Delhi Blast)। যাঁরা রয়েছেন, তাঁরাও দরজা জানালা আটকে চুপচাপ বসে আছেন। কেউ কথাও বলতে চাইছেন না। স্থানীয়রা বলছেন, পারভেজ খুবই চুপচাপ মানুষ ছিলেন, কারও সঙ্গে তেমন ওঠাবসা ছিল না। কিন্তু এখন তাঁর নাম জঙ্গি তদন্তে জড়িয়ে যাওয়ায় পুরো কলোনিতেই ভয় ছড়িয়েছে।
এদিকে তদন্তে উঠেছে আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ নাম—তামীম কাসিম ও তাজ। দু’জনেই নাকি লখনউতে পারভেজকে নানা কাজে সাহায্য করতেন (Delhi Blast)। তামীম তাঁকে বাড়ি ভাড়া থেকে নথি বানানোর কাজ পর্যন্ত সাহায্য করেছেন। আর তাজ—যিনি পারভেজের শ্যালক—নাকি বিভিন্ন জায়গায় তাঁর যাতায়াত নিশ্চিত করতেন। ইন্টিগ্রাল ইউনিভার্সিটিতে জমা দেওয়া পারভেজের কাগজপত্রেও নাকি শাহিন আর তামীমের নাম ছিল—কেন, তা খতিয়ে দেখছে এজেন্সিগুলি।
১২ নভেম্বর শাহিনের গ্রেফতারের পর পালানোর চেষ্টা করেছিলেন পারভেজ (Delhi Blast)। কিন্তু ধরা পড়েন। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, তিনি বিদেশি হ্যান্ডলার এবং জম্মুর কয়েকজন কন্টাক্টের সঙ্গে এনক্রিপটেড ফোন ও আন্তর্জাতিক সিমে কথা বলতেন। তাঁর বাড়িতে পাওয়া গেছে একটি গোপন হার্ডডিস্ক, একটি কম্পিউটার ও তিনটি বড় ছুরি। ডিজিটাল ডেটা ফরেনসিক পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছে।
তল্লাশি চলাকালেই বাড়ি থেকে জব্দ করা হয়েছে একটি গাড়ি এবং একটি মেডিক্যাল সাইন-লাগানো মোটরবাইক। চেক করে দেখা গেছে, মোটরবাইকটি পারভেজের নামে রেজিস্টার্ড, এবং ২০০৮ সাল থেকে কোনও ইন্স্যুরেন্স নেই (Delhi Blast)। গাড়িটিও আপাতত মাদিয়ান থানা চত্বরে রাখা হয়েছে। দু’টি গাড়িকেই ফরেনসিক পরীক্ষা করা হবে—কোনও বিস্ফোরক বা কেমিক্যাল বহনে এগুলি ব্যবহার হয়েছিল কি না, তা পরিষ্কার হবে রিপোর্ট এলেই।
পারভেজ আনসারি পেশায় ডাক্তার (Delhi Blast)। লখনউয়ের ইরা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস, আগরা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমডি—সবই নিয়ম মতো। ২০২১ সালে ইন্টিগ্রাল ইউনিভার্সিটিতে সিনিয়র রেসিডেন্ট হিসেবে যোগ দেন। সহকর্মীরা বলছেন, তিনি একেবারেই অন্তর্মুখী ছিলেন।
এইসবের মধ্যেই তদন্ত আরও উত্তপ্ত হয়েছে, কারণ লালকেল্লার মেট্রো স্টেশনের সামনে সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টায় যে হিউন্ডাই i20-এ ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়েছিল, তার মৃতের সংখ্যা বেড়েছে। গুরুতর আহত বিলাল হাসান—যিনি এলএনজেপি হাসপাতালে আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন—বৃহস্পতিবার মারা গেছেন। মোট মৃত্যু এখন ১৩।
ধীরগতির গাড়িটি লাল সিগন্যালে থামতেই বিস্ফোরণ হয়। কেন্দ্র সরকার ইতিমধ্যেই এটিকে “সন্ত্রাসী হামলা” হিসেবে ঘোষণা করেছে এবং তদন্তে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে নির্দেশ দিয়েছে। সোমবারই টেরর মডিউল ধ্বংস হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বিস্ফোরণ হওয়ায় গোটা বিষয়টি আরও রহস্যময় হয়ে উঠেছে।
টাকওয়া কলোনি, ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকা ডাক্তার পরিবার, বিদেশি সিম, গোপন হার্ডডিস্ক, বিস্ফোরণে বাড়তে থাকা মৃত্যুসংখ্যা—সব মিলিয়ে তদন্ত এখন আরও অন্ধকার দিকের দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে। স্থানীয় মানুষজন শুধু একটাই চাইছেন—সত্যিটা যেন দ্রুত সামনে আসে, আর তাঁদের ভয়ের দিনগুলো যেন শেষ হয়।












