উত্তর-পূর্ব ভারতে জলজন্তুর (North East India) রাজত্ব। টানা বৃষ্টিতে ভেসে গেল শহর-গ্রাম, ৩৬ জনের মৃত্যু, ৫.৫ লক্ষ মানুষ বিপর্যস্ত — “সরকার কোথায়?” প্রশ্নে ফুঁসে উঠল দেশ।
উত্তর-পূর্ব ভারত (North East India) যেন এখন ধ্বংসের মাঠ। টানা বৃষ্টি আর আকস্মিক বন্যায় ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে অসম, মণিপুর, মেঘালয়সহ (North East India) একাধিক রাজ্যে। ভয়ঙ্কর এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে এখনও পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৩৬ জন। ঘরছাড়া হয়েছে প্রায় ৫.৫ লক্ষ মানুষ। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা মণিপুরের রাজধানী ইম্ফলে, যেখানে লাখ লাখ মানুষ আজ গৃহহীন — কোথাও মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই, কোথাও খাবার জোটে না, আবার কোথাও শিশুরা কাঁদছে খোলামাঠে দাঁড়িয়ে।
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে — এই দুর্যোগের সময় কোথায় আছে সরকার ? কোথায় প্রশাসন? টিভিতে যতই বলা হোক ‘সঙ্কটের মোকাবিলায় তৎপর’, বাস্তবে বহু এলাকায় জলের নিচে লাশ পড়ে আছে, উদ্ধারকারীরা পৌঁছোয়নি এখনও!
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে এমন কিছু ভিডিও যেখানে দেখা যাচ্ছে — মানুষরা সাহায্যের জন্য ছুটছে, চিৎকার করছে, কিন্তু কেউ পৌঁছাচ্ছে না। মানুষ বলছে, “আমাদের সরকার শুধুই ভোটের সময় মনে রাখে, আজ আমরা জলে ভাসছি, তখন কেউ নেই”।
NDRF (ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স) ও সেনাবাহিনী যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ শুরু করেছে ঠিকই, কিন্তু জনসাধারণের ক্ষোভ বাড়ছে যে তাদের কাছে এই সাহায্য অনেক দেরিতে পৌঁছেছে। বহু মানুষ নিজের হাতে তৈরি ভেলা বা প্লাস্টিক ড্রামে ভেসে নিজেদের প্রাণ বাঁচাচ্ছে। অনেকে আবার ফেসবুক লাইভ করে বলছে — “আমরা মরছি, কেউ দেখছে না!”
ইম্ফল থেকে অসম — সব জায়গায় শুধু জল আর কান্না। স্কুল, হাসপাতাল, বাজার, রাস্তাঘাট — সব জলের নিচে। যেখানে সরকার ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি গড়ার স্বপ্ন দেখায়, সেখানে দেশের এক বড় অংশ পানীয় জলের জন্য হাহাকার করছে।
এক মা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “আমার ৫ বছরের ছেলেকে খুঁজে পাচ্ছি না — কেউ কিছু বলছে না, শুধু বলে সব ঠিক হয়ে যাবে।”
এই অবস্থায় বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছে — “সরকার কি কেবল নির্বাচন আর গডম্যানদের পাশে থাকতে জানে? প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে কি মানুষ মরার জন্যই?”
এমন অনেক জায়গায় এখনও কোনও ত্রাণ পৌঁছায়নি, অথচ সরকারি বিবৃতিতে বলা হচ্ছে ‘সব কিছু নিয়ন্ত্রণে’। এই দ্বিচারিতা নিয়েই ক্ষুব্ধ দেশের সচেতন নাগরিকরা।
কেউ লিখেছেন — “এই দেশের মানুষ যতবার ভাসে, সরকার ততবার চুপ থাকে!”
আবার কেউ বলছেন — “উত্তর-পূর্ব ভারতে বন্যা, আর দিল্লিতে চা-চক্র — ভারত কি এক দেশ নয়?”
এই প্রশ্নগুলি এখন কেবল উত্তর-পূর্ব ভারতের নয় — গোটা দেশের অন্তর থেকে উঠছে।
এখন প্রশ্ন একটাই — কতজন মরলে চোখ খুলবে সরকারের? আর কত ঘর ভেসে গেলে সক্রিয় হবে প্রশাসন?
এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ও যদি সরকার আর মিডিয়া মুখ ঘুরিয়ে থাকে, তাহলে সেই নীরবতা আরও মারাত্মক, আরও বিতর্কিত, আরও অমানবিক। এখনই না জাগলে, আগামী দিনে আরও বড় বিপর্যয় ডেকে আনবে আমাদের নিজেদের উদাসীনতা।
উত্তর-পূর্ব ভাসছে, আর বাকি ভারত কি শুধুই দর্শক?