হরিয়ানার রেওয়ারিতে ঘটল এক হৃদয়বিদারক, অথচ অনন্য ভালোবাসার ঘটনা। বুধবার, মাত্র ৩০ মিনিটের ব্যবধানে প্রয়াত হলেন এক বৃদ্ধ দম্পতি (Death)। ৯০ বছর বয়সি স্ত্রী সূরজি দেবী আগে প্রয়াত হন, আর স্ত্রীর মৃত্যুসংবাদ সহ্য করতে না পেরে ৯৩ বছর বয়সি স্বামী দিলীপ সিংও চেয়ারে বসে বসেই চিরবিদায় নিলেন (Death)। তাঁদের দীর্ঘ ৭০ বছরের দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটল যেন এক কবিতার মতো—একসঙ্গে জীবন, একসঙ্গে মৃত্যু।
এই আবেগঘন মুহূর্তে, পিথানওয়াস গ্রামে তাঁদের একসঙ্গে একই চিতায় দাহ করা হয়। তাঁদের মৃতদেহ বহনকারী আরতির গায়ে বাঁধা ছিল রঙিন বেলুন—জীবনের আনন্দময় অধ্যায়ের এক নিঃশব্দ উদযাপন যেন (Death)।
দম্পতির ছোট ছেলে ফুল সিং জানালেন সেই শেষ দিনের কথা। বুধবার সকালে, তাঁর স্ত্রী শ্বশুর-শাশুড়িকে চা দিতে যান। সূরজি দেবী তখন চা খেতে অস্বীকার করেন, আর দিলীপ সিং সেই কাপ নিয়ে ঘর ছেড়ে বাইরে এসে বসে পড়েন।
কিছুক্ষণ পর যখন ফুল সিংয়ের স্ত্রী ফের ঘরে আসেন, তখন তিনি দেখতে পান শাশুড়ি চুপচাপ শুয়ে আছেন (Death)—একেবারে নিস্পন্দ। সঙ্গে সঙ্গেই পরিবারের লোকজন ডাকেন, পরে গ্রামের ডাক্তার এসে জানিয়ে দেন—সূরজি দেবী আর নেই।
এই দুঃসংবাদ দিলীপ সিংয়ের কানে পৌঁছায়। তখন তিনি বাড়ির বাইরে একা বসে ছিলেন। স্ত্রীর মৃত্যুসংবাদ শুনে তিনি নিঃশব্দে বসেই থাকেন (Death)। কোনো প্রতিক্রিয়া না জানিয়ে, এক ধরনের আত্মস্থতার মধ্যে চলে যান। কিছুক্ষণের মধ্যেই মেয়েরা বাড়িতে এসে দেখে—তাঁরাও বাবাকে মৃত অবস্থায় চেয়ারে বসে থাকতে দেখেন।
ফুল সিং বলেন, “আমি বোনদের শুধু মায়ের মৃত্যুর কথা জানিয়েছিলাম, কিন্তু বাড়িতে এসে তারা দেখল বাবা-ও আর নেই। পুরো গ্রাম তখন এক অভূতপূর্ব শোকের আবহে স্তব্ধ হয়ে গেল।”
তবে শোকের মধ্যেও পরিবার খুঁজে নিয়েছে একরাশ শান্তি। তাঁদের মতে, সূরজি দেবী ও দিলীপ সিং একটি পূর্ণ জীবন কাটিয়েছেন। তাঁরা একসঙ্গে চারটি প্রজন্ম দেখেছেন—দুই ছেলে, চার মেয়ে, তিন নাতি এবং চারজন পরপৌত্র তাঁদের সংসারে।
তাঁদের বড় ছেলে রাজেন্দ্র সিং ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন, কিন্তু প্রায় ২০ বছর আগেই প্রয়াত হন। ছোট ছেলে ফুল সিং একজন কৃষক। তাঁদের নাতিরা বিভিন্ন সংস্থায় কর্মরত।
শেষ বিদায়ে গোটা গ্রাম সাক্ষী থাকল এক অনন্য ভালোবাসার স্মৃতিচারণে। দম্পতির আরতি বেলুনে সাজানো হয়, এবং বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে এক দীর্ঘ শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে তাঁদের শবযাত্রা সম্পন্ন হয়।
ফুল সিং জানান, “বাবা-মায়ের মধ্যে যে ভালোবাসা ছিল, তা ভাষায় বোঝানো যায় না। মৃত্যুর মুহূর্তেও তাঁরা একে অপরকে ছাড়তে পারেননি। আমরা ভেঙে পড়েছি ঠিকই, কিন্তু গর্বও হচ্ছে এমন এক ভালোবাসার সাক্ষী হতে পেরে।”