দলাই লামার (Dalai Lama) পরবর্তী অবতার নির্বাচন প্রসঙ্গে ভারতের সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজুর মন্তব্যে তীব্র আপত্তি জানাল চীন। শুক্রবার বেজিংয়ের তরফে স্পষ্ট জানানো হয়, দলাই লামার (Dalai Lama) অবতার নির্ধারণে তাঁর নিজের ইচ্ছা অনুসরণের যে কথা বলেছেন রিজিজু, তা চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ। ভারতকে এই বিষয়ে আরও সতর্ক হয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে তারা।
চীনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র মাও নিং বলেন, ভারতকে দলাই লামার (Dalai Lama) বিচ্ছিন্নতাবাদী চরিত্র সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখা উচিত এবং ‘শিজাং’ (চীনের দেওয়া নাম তিব্বতের) নিয়ে পূর্ব প্রতিশ্রুতি মান্য করা উচিত। চীন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, তিব্বত নিয়ে ভারতের মন্তব্য দুই দেশের সম্পর্কের উন্নতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে (Dalai Lama)।
প্রসঙ্গত, কিরেন রিজিজু বৃহস্পতিবার বলেন, দলাই লামার (Dalai Lama) পরবর্তী অবতার বা পুনর্জন্ম ঠিক করবেন একমাত্র তিনি এবং তিব্বতি বৌদ্ধ ধর্মের প্রথাগত প্রতিষ্ঠান। কোনও দেশ বা সরকার এতে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। এই মন্তব্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে প্রথম প্রতিক্রিয়া।
এর আগে বর্তমান ১৪তম দলাই লামা নিজেই জানিয়েছিলেন, তাঁর পুনর্জন্মের সিদ্ধান্ত একমাত্র Gaden Phodrang Trust (২০১৫ সালে দলাই লামার দফতর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত) নেবে। চীন অবশ্য এই পরিকল্পনায় সম্মতি দেয়নি। বরং তারা জানিয়েছে, পরবর্তী দলাই লামাকে চীনা সরকার অনুমোদন না দিলে তাঁর পুনর্জন্ম বৈধ হবে না।
এমন প্রেক্ষাপটে কিরেন রিজিজুর মন্তব্য আরও বিতর্ক উস্কে দিল। তিনি ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজীব রঞ্জন সিং বর্তমানে ধর্মশালায় দলাই লামার ৯০তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে আয়োজিত ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিচ্ছেন। রিজিজু বলেন, এই অনুষ্ঠান কেবলমাত্র ধর্মীয়, এর সঙ্গে কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য জড়িত নয়।
চীনের মুখপাত্র মাও নিং অবশ্য আগের অবস্থানেই অনড়। তিনি বলেন, দলাই লামা এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তিব্বতি ধর্মগুরু পাঞ্চেন লামার পুনর্জন্ম একটি “জটিল ধর্মীয় প্রক্রিয়া”। ইতিহাস, ধর্মীয় রীতি, ‘গোল্ডেন আর্ন’ থেকে নাম তোলার প্রথা এবং চীনের সরকারের অনুমোদন ছাড়া তা বৈধ নয়। ১৪তম দলাই লামাও এই প্রথা মেনেই পুনর্জন্ম লাভ করেছিলেন বলে দাবি চীনের।
এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক মহলের একাংশের মত, লাদাখ সীমান্ত সংঘাতের পর দীর্ঘ চার বছর চীন-ভারত সম্পর্ক কার্যত স্তব্ধ হয়ে ছিল। সম্প্রতি BRICS সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বৈঠকের পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করে। এমনকী, বহু বছর পর আবার শুরু হয়েছে কৈলাস-মানস সরোবর যাত্রাও। কিন্তু দলাই লামা ইস্যুতে ফের দুই দেশের সম্পর্কে উত্তেজনা বাড়ার ইঙ্গিত স্পষ্ট।