এ যেন বাস্তবের ‘গ্যাংস অব পটনা’! সিনেমার পর্দায় এমন দৃশ্য দেখতে অভ্যস্ত হলেও, বৃহস্পতিবার সকালে বাস্তবেই ঘটে গেল চাঞ্চল্যকর এক হত্যাকাণ্ড (Bihar)। বিহারের রাজধানী পটনার একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ-তে ঢুকে একাধিক গুলি চালিয়ে হত্যা করা হল এক দাগী অপরাধীকে। হাসপাতালের মতো নিরাপদ জায়গায় ঢুকে খুন! এই ঘটনা নিয়ে রীতিমতো চমকে উঠেছে বিহারবাসী (Bihar)। আর এই ঘটনা ঘিরেই ফের প্রশ্নের মুখে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা।
নিহত ব্যক্তির নাম চন্দন মিশ্র (Bihar)। সূত্রের খবর, তিনি এক কুখ্যাত অপরাধী, যার বিরুদ্ধে খুন-সহ একাধিক গুরুতর অভিযোগ রয়েছে (Bihar)। বক্সারের জেলে বন্দি ছিলেন তিনি, পরে তাঁকে ভাগলপুরে স্থানান্তরিত করা হয়। সম্প্রতি শারীরিক অসুস্থতার কারণে প্যারোলে মুক্তি পান চন্দন। তারপর থেকেই তিনি পটনার এক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
আজ, বৃহস্পতিবার সকাল সকাল ৫ জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি পেশেন্টের পরিচিত সেজে হাসপাতালের ভিতরে ঢোকেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তারা সরাসরি আইসিইউ-তে পৌঁছে যায়। সেখানে চন্দন মিশ্রকে লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে থাকে। মুহূর্তের মধ্যে তাঁর দেহ ঝাঁঝরা হয়ে যায়। ঘটনা ঘটিয়েই পাঁচজন আততায়ী এলাকা ছেড়ে চম্পট দেয়। হাসপাতাল চত্বরজুড়ে মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক তদন্তে মনে করা হচ্ছে, প্রতিদ্বন্দ্বী গ্যাং-এর সদস্যরা এই পরিকল্পিত হামলা চালিয়েছে। হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এত দুর্বল ছিল কীভাবে, সেই প্রশ্নও উঠছে। এমনকি, হাসপাতালের সিকিউরিটি গার্ডদের ভূমিকা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছে তদন্তকারী দল। তাদের কেউ ভিতর থেকে মদত দিয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এই ঘটনা সামনে আসতেই বিহারের রাজনৈতিক মহলেও শুরু হয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া। বিগত কয়েক সপ্তাহে বিহারে একের পর এক খুনের ঘটনা সামনে এসেছে। কখনও বিজেপি নেতা, কখনও আইনজীবী, কখনও বা ব্যবসায়ী খুন হয়েছেন প্রকাশ্যে। এই পরিস্থিতিতে বিরোধী দল আরজেডির নেতা তেজস্বী যাদব প্রশ্ন তুলেছেন, “এখন তো আইসিইউ-তেও খুন হচ্ছে! বিহারে কি কেউ কোথাও নিরাপদ নয়?”
আইন-শৃঙ্খলার এই বেহাল দশা নিয়ে নেটমাধ্যমেও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন সাধারণ মানুষ। তাঁদের বক্তব্য, “হাসপাতালের মতো স্পর্শকাতর জায়গায় যদি এত সহজে খুন হয়ে যায়, তবে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়?”
পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ, চন্দনের সঙ্গে কার কার শত্রুতা ছিল, হাসপাতালের কর্মীদের ভূমিকা কতটা স্বচ্ছ—সব কিছু। তবে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড যে বিহারের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ফের প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।