২০২৫-এ বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ জোর কদমে চলছে (Bihar)। এর মধ্যেই সীমাঞ্চল থেকে উঠে আসা এক চাঞ্চল্যকর তথ্য নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে প্রশাসন ও রাজনৈতিক মহলে। বিহারের কিশনগঞ্জ জেলায় জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহেই ২ লক্ষেরও বেশি মানুষ স্থায়ী বাসিন্দা শংসাপত্রের আবেদন করেছেন। একইভাবে মুজফ্ফরপুর জেলাতেও প্রায় ১ লক্ষ আবেদন জমা পড়েছে (Bihar)।
এই অস্বাভাবিক আবেদনের ঢল ঘিরে ফের উঠে এসেছে সীমাঞ্চল অঞ্চলে বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পুরনো আশঙ্কা (Bihar)। নেপালের সীমানা ঘেঁষা এই অঞ্চল দীর্ঘদিন ধরেই অনুপ্রবেশের হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত। এই প্রসঙ্গে বিহারের উপ-মুখ্যমন্ত্রী সম্রাট চৌধুরী সংবাদমাধ্যম News18-কে জানান, “সীমাঞ্চলে বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নতুন কিছু নয়। তারা ভুয়ো নথি দেখিয়ে স্থায়ী বাসিন্দা শংসাপত্র পেতে চাইছে, যাতে ভোটার তালিকায় নাম তুলতে পারে।”
সম্রাট চৌধুরী স্পষ্ট জানিয়েছেন (Bihar), “রাজ্য ও কেন্দ্র — দুই সরকারই সতর্ক রয়েছে। তদন্তকারী সংস্থাগুলি এই বিষয়ে পূর্ণ তদন্ত করছে। কোনও অনুপ্রবেশকারীকে বিহারের নাগরিকত্ব পেতে দেওয়া হবে না।”
বর্তমানে ভোটার তালিকা সংশোধনে বিহারের ৭.৯০ কোটি ভোটারের জন্য বুথ লেভেল অফিসাররা (BLO) কাজ করছেন। তবে কিশনগঞ্জ ও মুজফ্ফরপুরে হঠাৎ এত বিপুল সংখ্যক বাসিন্দা শংসাপত্রের আবেদন প্রশ্ন তুলেছে নথিগুলির সত্যতা নিয়ে। স্থানীয় প্রশাসনের একাংশের মতে, বহু আবেদনকারীর পরিচয়পত্র ও নথিপত্র যাচাই করে সন্দেহজনক মনে হয়েছে।
২০১৯ সালে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের রিপোর্ট অনুযায়ী, বিহারে প্রায় ১০ লক্ষ অবৈধ অনুপ্রবেশকারী রয়েছে, যার অধিকাংশই সীমাঞ্চল অঞ্চলে বসবাস করছে। সম্প্রতি রক্সৌল সীমান্ত থেকে ধৃত এক বাংলাদেশি নাগরিক, সৈয়দ ইকবাল, ফের এই সমস্যা সামনে এনেছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলি জানাচ্ছে, বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গারা নেপাল হয়ে বিহারে প্রবেশ করছে এবং জাল আধার কার্ড ও ঠিকানা প্রমাণপত্রের মাধ্যমে ভোটার তালিকায় নাম তুলতে চাইছে।
এরপরই কিশনগঞ্জ ও মুজফ্ফরপুরে আবেদনপত্রের ওপর নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে। প্রতিটি নথি যাচাই করা হচ্ছে, আধার এবং অন্যান্য পরিচয়পত্রের বৈধতা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।
রাজনৈতিকভাবে এই ইস্যু বড় দাওয়াই হয়ে উঠেছে এনডিএ-র জন্য। বিজেপি ও জেডিইউ এই ঘটনাকে তাদের অনুপ্রবেশ বিরোধী কঠোর নীতির উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরছে। অপরদিকে আরজেডি ও মহাজোট এই ইস্যুকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলে দাবি করছে।
আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব ভোটার তালিকা সংশোধন অভিযানের সমালোচনায় সরব হয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ প্রকৃত ভোটারকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এরই প্রতিবাদে আরজেডি, কংগ্রেস ও অন্যান্য বিরোধী দলগুলি বিহার বন্ধের ডাক দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০০৫ সালের পর এই প্রথমবার বিহারে এত বড় মাপের ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ চলছে। এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনিক সতর্কতা ও রাজনৈতিক টানাপোড়েন — দুই-ই তুঙ্গে।