ছ’বছর ধরে স্বামীর কোনও খোঁজ নেই। তবু আশা ছাড়েননি স্ত্রী। বুকের ভিতর একটাই বিশ্বাস ছিল—একদিন না একদিন ফিরে আসবেন তিনি। প্রতিদিন সেই আশাতেই দিন গুনেছেন। কিন্তু ভোটার তালিকার এসআইআর ফর্ম ফিলাপ করতে গিয়ে যে সত্য সামনে এল, তা যেন এক নিমেষে সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিল (SIR)। নিখোঁজ স্বামী শুধু ফেরেননি, গড়ে তুলেছেন নতুন সংসারও। ঘটনাটি পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালের মনসুকার কিশোরচক গ্রামের।
কিশোরচকের বাসিন্দা কার্তিক মাইতি দীর্ঘদিন ধরে হায়দরাবাদে সোনার কাজ করতেন (SIR)। স্ত্রী ও দুই সন্তান সেই সময় তাঁর সঙ্গেই থাকতেন। বছর সাতেক আগে স্ত্রী ও সন্তানদের তিনি গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। আর তার কিছুদিন পর থেকেই আচমকা পরিবারের সঙ্গে সমস্ত যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে যায়। মোবাইল বন্ধ, কোনও খবর নেই, কোনও খোঁজ নেই। আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশীরা বহু খোঁজাখুঁজি করেও কার্তিকের কোনও সন্ধান পাননি। জীবিত না মৃত—এই ধন্দেই বছরের পর বছর কেটেছে স্ত্রীর (SIR)।
এই অবস্থাতেই এসআইআর-এর (SIR) ফর্ম ফিলাপ করতে গিয়েই ঘটে যায় নাটকীয় মোড়। বিএলও যখন কার্তিকের বাড়িতে ফর্ম পূরণ করতে যান, তখন তাঁর স্ত্রী স্বামীর ছবি ও তথ্য দিয়ে ফর্ম পূরণ করে দেন। অনলাইনে আপলোড করতে গিয়ে দেখা যায়, কার্তিকের নামে ইতিমধ্যেই অন্য জায়গা থেকে ফর্ম জমা পড়েছে। ঠিকানা দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার সোনারপুর। খবর পেতেই যেন আকাশ ভেঙে পড়ে পরিবারের মাথায়। দ্রুত সেই ঠিকানায় গিয়ে পৌঁছন পরিবারের সদস্যরা। সেখানে গিয়ে যা দেখেন, তা বিশ্বাস করাই কঠিন—কার্তিক সেখানে দ্বিতীয় বিয়ে করে দিব্যি সংসার করছেন। রয়েছে নতুন স্ত্রী ও এক সন্তান (SIR)।
এরপর কার্তিককে নিয়ে আসা হয় কিশোরচকে। দীর্ঘ ছ’বছর পর তাঁকে দেখতে গ্রামজুড়ে ভিড় জমে যায়। এলাকার মানুষের বিস্ময়, ক্ষোভ আর কৌতূহল একসঙ্গে আছড়ে পড়ে। কার্তিকের বক্তব্য, প্রথম স্ত্রী থাকার পরও তিনি আর এক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন, বিয়ে করেন। সমাজের ভয়, লোকলজ্জার কারণেই ছ’বছর কারও সঙ্গে যোগাযোগ রাখেননি। এখন তিনি চাইছেন, দুই স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে একসঙ্গে সংসার করতে। কিন্তু সেই প্রস্তাব মানতে রাজি নন প্রথম পক্ষের স্ত্রী।
প্রথম স্ত্রী মৌসুমি মাইতির চোখে জল আর ক্ষোভ একসঙ্গে। তাঁর কথায়, সাত বছর আগে স্বামী তাঁদের গ্রামে রেখে চলে যান। তারপর ছ’বছর কোনও খোঁজ নেই। তবুও তিনি মনে মনে অপেক্ষা করেছেন। বিশ্বাস করেছেন, একদিন ফিরে আসবেন। কিন্তু সেই ফিরে আসা এমন হবে, তা কল্পনাও করতে পারেননি। তাঁর স্পষ্ট দাবি, দুই সংসার একসঙ্গে মেনে নেওয়া তাঁর পক্ষে কোনওভাবেই সম্ভব নয়। স্বামীর দ্বিতীয় স্ত্রী সংবাদমাধ্যমের সামনে আসতেও চাননি।
ভোটার ফর্মের একটি তথ্য বদলে দিল ছ’বছরের প্রতীক্ষা, ভালোবাসা আর সম্পর্কের অর্থ। এসআইআর-এর একটি ক্লিকেই খুলে গেল এক নিখোঁজ জীবনের সমস্ত গোপন অধ্যায়।












