একদিকে উত্তরবঙ্গের ধূপগুড়ি, অন্যদিকে দক্ষিণের কুলপি। দুই প্রান্তের বঙ্গে এক ভয়ংকর মিল— ভোটার তালিকা সংশোধন ঘিরে আতঙ্ক ও মৃত্যু। রাজ্যে যখন ভোটার তালিকার নিবিড় পরিমার্জন বা SIR (Sir Death) চলছে, সেই সময়েই দু’দুটি মৃত্যু নিয়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। পরিবারগুলির অভিযোগ, এই ‘পরিমার্জন’ই প্রাণ কেড়েছে তাঁদের প্রিয়জনের।
জলপাইগুড়ির ধূপগুড়ির বারোঘরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ ডাঙ্গাপাড়ার বাসিন্দা লালু রাম বর্মন (৭২) দীর্ঘদিন ধরেই চিন্তিত ছিলেন। ২০০২ সালের সংশোধিত ভোটার তালিকায় নাম ছিল না তাঁর। ভোটার কার্ডও পাননি। বৃহস্পতিবার বিএলও যখন ভোটার ফর্ম নিয়ে তাঁর বাড়িতে আসেন, তখনই আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি (Sir Death)। কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত্যু। তাঁর পুত্রবধূ মতি মালা বর্মন বলেন, “শ্বশুরমশাই সারাদিন চিন্তিত ছিলেন। বারবার বলছিলেন, নাম না থাকলে এবার কী হবে? ফর্ম হাতে পেয়েই ভয় পেয়ে যান।”
সংশ্লিষ্ট বুথের বিএলও (Sir Death) সুমিত দাস বলেন, “ওঁদের বাড়িতে পাঁচজনের মধ্যে চারজনের হাতে ফর্ম দিয়েছিলাম। তারপর পাশের বাড়িতে যেতেই শুনি বৃদ্ধ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।”
এদিকে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপি বিধানসভার অন্তর্গত কালীচরণপুরে একই দৃশ্য (Sir Death)। ঢোলাহাটের কিশোরপুর হাইমাদ্রাসার শিক্ষক শাহাবুদ্দিন পাইক (৪৫) গত শনিবার ক্লাস নেওয়ার সময় আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। পাঁচ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াইয়ের পর অবশেষে মৃত্যু। চিকিৎসকদের দাবি, সেরিব্রাল অ্যাটাক। তবে পরিবারের দাবি, “২০০২ সালের ভোটার তালিকায় ওঁর নাম ছিল না, তাই তিনি ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। রাতদিন চিন্তা করতেন নাম কাটা পড়বে কিনা।”
ইতিমধ্যেই মৃত শিক্ষকের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন তৃণমূল সাংসদ (Sir Death) বাপি হালদার ও কুলপির বিধায়ক যোগরঞ্জন হালদার। বাপি বলেন, “মানুষকে আশ্বস্ত করছি, বিজেপি ভয় দেখাচ্ছে। কাউকে রোহিঙ্গা, কাউকে অনুপ্রবেশকারী বলা হচ্ছে। এভাবে আতঙ্ক তৈরি করছে ওরা।” অন্যদিকে, বিজেপির স্থানীয় নেতৃত্বের বক্তব্য, “এসব সবই তৃণমূলের সাজানো নাটক, রাজনৈতিক সহানুভূতি আদায়ের প্রচেষ্টা।”
রাজনৈতিক মহলের বিশ্লেষণ— রাজ্যে ভোটার তালিকার নিবিড় পরিমার্জনকে কেন্দ্র করে এখন সাধারণ মানুষ আতঙ্কে। ২০০২ সালের ভোটার ডেটা উল্লেখ থাকায় অনেকে বিভ্রান্ত হচ্ছেন, নাম বাদ পড়লে নাগরিকত্ব প্রশ্নে বিপাকে পড়বেন কি না, তা নিয়েও ভয় বেড়েছে। আর সেই ভয় থেকেই হয়তো জন্ম নিচ্ছে এই চরম মানসিক চাপের ঘটনা।
ধূপগুড়ি থেকে কুলপি— উত্তর থেকে দক্ষিণ— আতঙ্কের এই ছায়া এখন গোটা বাংলাতেই ছড়িয়ে পড়ছে। প্রশাসন বলছে, “যাঁদের নাম বাদ গিয়েছে, তাঁরা আবেদন জানাতে পারেন।” কিন্তু মানুষের মনে প্রশ্ন— “তার আগেই যদি জীবনটাই ফুরিয়ে যায়?”













