বাংলার রাজনীতি যেন আগুনের রেখায় হাঁটছে। আগরপাড়ার প্রদীপ কর কাণ্ডের রেশ কাটার আগেই সামনে এল আরও একটি আত্মহত্যার ঘটনা (SIR Death)। এবার বীরভূম। ইলামবাজার ব্লকের স্কুলবাগান সুভাষপল্লীতে মেয়ের বাড়িতে এসে গলায় দড়ি দিলেন বৃদ্ধ ক্ষিতীশচন্দ্র মজুমদার (SIR Death)। পরিবারের দাবি, যাঁর জীবনের শেষভর শান্তিতে থাকবার কথা, তিনি শেষ পর্যন্ত ভেঙে ফেললেন বেঁচে থাকার আশা— কারণ তাঁর মনে জন্মেছিল SIR নিয়ে গভীর আতঙ্ক।
পরিবারের কথায়, প্রতিদিনের মতোই তিনি রাতের খাবার খেয়ে শুতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সকালবেলায় ঘরে ঢুকে মেয়ের চোখে পড়ে ভয়ংকর দৃশ্য— বাবা আর নেই (SIR Death)। তাঁর বক্তব্য, “বাবা বাইরে থেকে শুনেছিল SIR নিয়ে। ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম ছিল না। তাই ভয় পেয়েছিল।” মেয়ের গলায় অসহায় হতাশা, “বাবার ভোটার কার্ড ছিল। কিন্তু সেই পুরনো তালিকায় নাম না থাকায় তিনি ভাবছিলেন, যদি কোনও দিন তাড়িয়ে দেয় (SIR Death)?”
পরিবারের আরও এক সদস্য জানান, তাঁদের দাদু বহু বছর আগে বাংলাদেশ থেকে এসেছিলেন। জীবন কাটিয়েছেন এই বাংলায়। আধার বা ভোটার কার্ডের সময়ের আগের মানুষ। তাই নথি নিয়ে ভাবেননি। আর এখন সেই কাগজের বোঝাই তাঁর ভয়, তাঁর মৃত্যু। পরিবারের আর্তনাদ, “SIR বন্ধ করুন, এটা সাধারণ মানুষকে মেরে ফেলছে। আমরা ভয় পাচ্ছি।”
এই ঘটনা সামনে আসতেই তৃণমূল-বিজেপির রাজনৈতিক তরজা ফের চরমে। বিজেপি নেতা জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় অভিযোগ তুললেন, “যেখানে যা মৃত্যু হচ্ছে, তৃণমূল সেটাকে SIR–NRC ভয় দেখিয়ে ব্যবহার করছে। এগুলো দাঁড়ায় না।” তাঁর দাবি, “মানুষ এখন সত্যিটা বুঝে গেছে।”
কিন্তু অন্য প্রান্ত থেকে সরাসরি পাল্টা সুর তৃণমূলের মুখপাত্র তন্ময় ঘোষের। তাঁর বক্তব্য, “এটা আত্মহত্যা নয়, শহিদি মৃত্যু। বিজেপির কারণে এই প্রাণগুলো যাচ্ছে। আমরা বারবার সতর্ক করেছি। এই মৃত্যুর হিসেব বিজেপিকে দিতে হবে।”
আগরপাড়া–র প্রদীপ করের মৃত্যু নিয়ে ইতিমধ্যেই উত্তেজনা তুঙ্গে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বাড়ি গিয়ে ‘জাস্টিস ফর প্রদীপ’ স্লোগান তুলেছেন। তারই মাঝে ফের আর এক মৃত্যু— আর তার মধ্যেই কোচবিহারের দিনহাটায় আরও এক বৃদ্ধ আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ।
রাজ্যজুড়ে ভয় কি তবে সত্যিই ছড়িয়ে পড়ছে? নাকি এটা নিয়ে চলছে ভয় দেখানো আর রাজনৈতিক স্ক্রিপ্ট? মানুষের মনেই এখন প্রশ্ন— সত্যি কি কাগজের আতঙ্কে সাধারণ মানুষের প্রাণ যাচ্ছে, নাকি এ শুধু ভোটের লড়াইয়ের নতুন অস্ত্র?
বাংলায় উত্তাপ বাড়ছে, আর প্রতিটি মৃত্যু যেন নতুন করে লিখছে আতঙ্কের রাজনীতি। সামনে আরও কী অপেক্ষা করছে— সেই উত্তর সময়ই দেবে।












