হাকিমপুর, স্বরূপনগর, তারালি—দক্ষিণবঙ্গের সীমান্তবর্তী এই সব এলাকাতে গত কয়েকদিন ধরেই দেখা যাচ্ছে অস্বাভাবিক ভিড়। মানুষের সেই ভিড়ের দিক একটাই, বাংলাদেশমুখী। এসআইআর নিয়ে আচমকা তৈরি হওয়া আতঙ্কে হাজার হাজার মানুষ সীমান্তের দিকে ছুটছেন। একই ছবি দেখা যাচ্ছে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলাতেও (siliguri)। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে সতর্ক রয়েছে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীও।
বিএলও-রা জানাচ্ছেন, ফর্ম যাচাই করতে গিয়ে তাঁরা বহু সন্দেহজনক ভোটারের খোঁজ পাচ্ছেন (siliguri)। তাঁদের কথাবার্তা, কাগজপত্র এবং ২০০২ সালের ভোটার তালিকার সঙ্গে মিলিয়ে দেখতেই তৈরি হচ্ছে আরও ধোঁয়াশা। এলাকায় বাংলাদেশিদের দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করার কথাও অস্বীকার করছেন না তৃণমূল এবং বিজেপির স্থানীয় নেতৃত্ব। ভোটারদের একাংশ পর্যন্ত খুলে বলছেন, তাঁরা ২০০২ সালের পরে বাংলাদেশ থেকে এসে এখানে বসতি গড়েছেন, এখন এসআইআরের কারণে তাঁরা ভয়াবহ বিপদের মুখে (Siliguri)।
উত্তরবঙ্গের ডাবগ্রাম দুই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় পরিস্থিতি আরও স্পষ্ট। ফকদইবাড়ি, মাঝাবাড়ি–সহ বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বহু নিম্নবিত্ত পরিবার বসবাস করেন। স্থানীয় সূত্রে খবর, তাঁদের বহুজনই ২০০২–এর পরে বাংলাদেশ থেকে চলে এসে এ দেশেই স্থায়ী হয়েছেন। এরপর ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, প্যান কার্ড—সবই তৈরি করে নিয়েছেন। কিন্তু এখন এসআইআরের ভয়াবহ চাপ এসে হাজির হওয়ায় তাঁদের কাছে ২০০২ সালের নাগরিক সংক্রান্ত কোনও তথ্যই নেই। বিএলওরা জানাচ্ছেন, ফর্ম যাচাই করতে গিয়ে এরা অনেকেই অসংলগ্ন কথা বলছেন। কারও পরিবারের খবর জিজ্ঞেস করলে একজন বলছেন কাকা আছে, তারপর বলছেন জেঠু আছে অসমে, আবার কেউ বলছেন বিহারে। কথাবার্তার মধ্যে বারবার তৈরি হচ্ছে সন্দেহ।
এমনকি দু’জন ভোটার প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন যে তাঁরা ২০০৪ সালের পরে ভারত এসেছেন। তাঁদের বাড়ি আগে ঢাকার কাছে ছিল। এখন তাঁরা এখানে পড়াশোনা করে ব্যবসাও শুরু করেছেন। তাঁদের কাছে ভারতের পরিচয়পত্র থাকলেও এসআইআরের কারণে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ পড়ার ভয় তাড়া করছে।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে এলাকার রাজনৈতিক পরিবেশ। তৃণমূলের প্রাক্তন প্রধান ও বর্তমান পঞ্চায়েত সদস্য সুধা সিংহ চট্টোপাধ্যায় দাবি করেছেন, বাংলাদেশ থেকে আসা বহু মানুষকে ভুলিয়ে বিজেপি ভোট নেয়। এবার এসআইআরের প্রক্রিয়ায় তাঁরাই সমস্যায় পড়বেন। অন্যদিকে বিজেপি বিধায়ক শিখা চট্টোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, ২০০২–এর পরে যাঁরা এসেছেন তাঁদের মধ্যে হিন্দুরা সিএএ–র মাধ্যমে নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন। ফলে তাঁদের কোনও বিপদ নেই।
কিন্তু এই রাজনৈতিক লড়াইয়ের মাঝেই আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষ। ভোটার তালিকায় নাম থাকবে নাকি কাটবে—এই অনিশ্চয়তায় অনেকে রাতারাতি বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এসআইআরের ভিড়ে কাঁপছে সীমান্তজুড়ে মানুষের মন, আর প্রশ্ন উঠছে—এই আতঙ্কের অন্ত কোথায়?













