দক্ষিণবঙ্গে নিম্নচাপ কেটে গেলেও তার জের রয়ে গিয়েছে কংসাবতী উপত্যকায়। পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার উপর দিয়ে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি নামায় মঙ্গলবার সন্ধেয় মুকুটমণিপুর জলাধারে জলস্তর চরমসীমা ছুঁয়ে যায় (Red Alert)।— সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪৩৬.১৫ ফুট, যা স্বাভাবিক ক্ষমতার (৪৩৪ ফুট) অনেক ওপরে। জলচাপ সামাল দিতে সেচ দফতর দ্রুত পদক্ষেপ নেয়। সন্ধ্যা ছ’টা থেকে জলাধার ছাড়ের হার ১৭ হাজার ৫০০ কিউসেক থেকে এক লাফে ২৭ হাজার ৫০০ কিউসেক করা হয়। ফলে কংসাবতী ও কুমারী—দুই নদীতেই হঠাৎ ফুরিয়ে ওঠে স্রোত, যা সরাসরি আছড়ে পড়ছে নীচের দিকে থাকা পশ্চিম মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ সমতলে (Red Alert)।
বাঁকুড়ার পাহাড় ঘেঁষা এই জলাধারে মূলত জল আসে কংসাবতী ও কুমারী নদী বেয়ে। টানা তিন দিন পুরুলিয়ায় মেঘভাঙা বৃষ্টির পর দুই নদী দিয়ে বিপুল জল নেমে এসে পারদ চড়িয়ে দেয় জলাধারের (Red Alert)। ফলে বাঁধের গেট খুলতেই নিমেষে বাড়তে শুরু করে ভাটির জলস্তর। ইতিমধ্যে ঘাটাল ও চন্দ্রকোণা জলমগ্ন; পাঁশকুড়া—দিব্যদৃষ্টিতে বন্যা-সতর্কতায়। সেচ দফতর সূত্রে খবর, ঝাড়খণ্ড ও লাগোয়া পুরুলিয়ায় যদি আবার মুষলধারে বৃষ্টি নামে, তবে ছাড়ের পরিমাণ আরও বাড়ানোর সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না (Red Alert)।
পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রশাসন ইতিমধ্যেই সতর্কতা ঘোষণা করেছে। নদীতীরবর্তী গ্রামের বাসিন্দাদের উপকূলভাগে সরে যেতে অনুরোধ করা হয়েছে। ত্রাণ শিবির খোলা শুরু হয়েছে ঘাটাল মহকুমায়। কংসাবতীর জলস্ফীতি যদি রাতভর বেড়ে চলে, তা হলে শহর পাঁশকুড়া, পিংলা, মোহনপুর—একাধিক ব্লক জলের তলায় যাওয়ার আশঙ্কা বিশেষজ্ঞেরা উভয় হাতে তুলে ধরছেন।
২০১৭ সালেও একই পরিস্থিতিতে মুকুটমণিপুর থেকে হু হু করে জল ছাড়ায় ঘাটাল ডুবে গিয়েছিল; বছর আটেক আগের সেই স্মৃতি এখনও টাটকা মানুষের মনে। অনেকেই বাঁধের বর্তমান পরিস্থিতিকে সেই বিপর্যয়ের পুনরাবৃত্তি বলেই মনে করছেন। সেচ দফতর অবশ্য জানিয়েছে, পর্যাপ্ত নজরদারি রয়েছে; পরিস্থিতি অনুযায়ী গেট নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
তবু স্থানীয় বাসিন্দাদের কপালের ভাঁজ গভীর। তাঁদের প্রশ্ন, “বৃষ্টি নামলেই কেন এতটা জল ছাড়তে হয়? বারবার কি তবে জলজটে ডুবতে হবে ঘরবাড়ি?” উত্তর আপাতত সময়ের হাতে।