প্রেমে বাধা এলেই সরিয়ে দাও! এমনই মনস্তত্ত্ব নিয়ে অপরাধের জগতে রাজত্ব করে বেড়াচ্ছে বিহারের কুখ্যাত গ্যাংস্টার শেরু সিং ওরফে ওঙ্কারনাথ সিং (Patna Shootout)। পুরুলিয়া সংশোধনাগারে বন্দি থাকলেও, খুনের ষড়যন্ত্র থেকে শুরু করে ডাকাতির পরিকল্পনা—সবই রচিত হচ্ছিল তাঁর নির্দেশে (Patna Shootout)। আর এবার সেই শেরুই মূলচক্রী হিসেবে উঠে এল বিহারের চাঞ্চল্যকর গ্যাংস্টার চন্দন মিশ্র খুনের ঘটনায় (Patna Shootout)।
বিহার পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (STF) চন্দন হত্যা মামলায় একাধিক ধৃতকে জেরা করে জানতে পেরেছে, শেরুর ‘খুনের খাতা’ খুলেছিল বহু আগেই—বিহারের এক বিচারককে হত্যা করে (Patna Shootout)। কারণ? বিচারকের ভাইঝির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে বাধা দিয়েছিলেন তিনি। সেই সম্পর্কের পথের কাঁটা হয়ে ওঠা বিচারককেই সরিয়ে দেয় শেরু। তখন অবশ্য চন্দনের আত্মীয়া লাকি মিশ্রের সঙ্গে প্রেমে জড়াননি তিনি। পরে সেই লাকি মিশ্রই হয় তাঁর স্ত্রী। কিন্তু শ্যালিকার সঙ্গে সম্পর্ক মানতে পারেননি গ্যাংস্টার চন্দন। আর সেখানেই তৈরি হয় চন্দন ও শেরুর রেষারেষি (Patna Shootout)।
বিহার পুলিশ জানতে পেরেছে, প্রায় তিন বছর ধরে চন্দনকে ‘দুশমন’ হিসেবে দেখে আসছিল শেরু (Patna Shootout)। সেই পরিকল্পনার চূড়ান্ত রূপ মেলে চন্দনের অসুস্থতাকে কাজে লাগিয়ে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্যারোলে মুক্তি পাওয়া চন্দনকে ভর্তি করানো হয় পাটনার এক বেসরকারি হাসপাতালে—যা শেরু এবং তার বিশ্বস্ত অনুচরদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। আসলে, সেই হাসপাতাল চেনা ছিল আরেক ধৃত বাদশার, যে এলাকাতেই বড় হয়েছে। এই বাদশাই শেরুকে জানায়, কোথায় চন্দনকে ‘খতম’ করা সহজ হবে।
তদন্তে উঠে এসেছে আরও ভয়াবহ তথ্য। চন্দনের এক সময়ের বিশ্বস্ত অনুচরও গোপনে শেরুর দলে নাম লিখিয়েছিল। সেই বিশ্বাসভঙ্গই চন্দনের মৃত্যুর পেছনে বড় ভূমিকা নেয়। এখন সেই অনুচরের খোঁজেই তল্লাশি চালাচ্ছে বিহার পুলিশ।
শুধু চন্দনের খুন নয়, পুরুলিয়া শহরের সেনকো গোল্ড লুটেরও নেপথ্যে ছিল শেরু। তখনও সে জেলে বসে থেকে পুরো অপারেশন চালিয়েছিল। এমনকী, আদর্শনগরের বেউড় জেলে থাকাকালীন আদালতে হাজিরার দিন অন্য কয়েদিদের বিরিয়ানি খাওয়াত শেরু! এই খাবার অর্ডার দেওয়া হত ফোন পে-এর মাধ্যমে ফুড অ্যাপ থেকে। একইভাবে পুরুলিয়া জেল থেকেও নানা অপরাধের ছক কষছে শেরু, যার একের পর এক প্রমাণ হাতে পাচ্ছে তদন্তকারীরা।
চন্দন খুনের পর বিহারের গয়া জেলে থাকা শেরুর আরেক বিশ্বস্ত সঙ্গী হিরো ওরফে অমিত সিং রীতিমতো রিল বানিয়ে উল্লাস করে, যা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। তার আগেই চন্দনও নিজের দাপট দেখাতে রিল বানিয়েছিল। আর সেখানেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে গ্যাং ওয়ারের সাইবার যুদ্ধ। এই রিলই নজরে আনে তদন্তকারীদের, যা থেকে স্পষ্ট হয়ে যায়—জেলে বসেও থেমে নেই অপরাধ, বরং রীতিমতো ‘নেটওয়ার্কে’ চলছে অপরাধ জগতের রাজনীতি।
এই চক্র যে কত গভীর, তা ভেবে কপালে হাত বিহার পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের। কারণ, স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে—‘সর্ষের মধ্যেই ভূত’! প্রশাসনের অন্দরেই সক্রিয় এমন গোপন হাত, যাদের মদতেই অপরাধীর হাত দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়ে উঠছে।