আলুথালু চুল, মুখে শোকের ছাপ। ছাপা শাড়ি পরে জানালার ধারে বসে কান্নার জলে গলা বুজে যাচ্ছে সুমিত্রা দাসের— মৃত কিশোর কৃষ্ণেন্দু দাসের মা (Panskura)। কথা বলতে গিয়ে হাঁপিয়ে যাচ্ছেন তিনি, কিন্তু থামছেন না। একের পর এক বিস্ফোরক অভিযোগ ছুঁড়ে দিচ্ছেন পুলিশের ভূমিকা ও সিভিক ভলান্টিয়ারের আচরণের দিকে। তাঁর দাবি, ‘‘ওই সিভিক ভলান্টিয়ার যদি প্রকাশ্যে ভরা বাজারে আমার ছেলেকে চিপস চুরির মতো তুচ্ছ ঘটনায় বকাঝকা না করত, তাহলে ও এমন সিদ্ধান্ত নিত না।’’ সেই ক্ষোভ এখন ফেটে পড়েছে চরম আর্তিতে।
চলতি সপ্তাহে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তমলুক এলাকায় চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় (Panskura) চেপে বসেছে প্রশাসনের দায় এড়ানোর অভিযোগ। সুমিত্রাদেবীর দাবি, সন্তানকে শেষবারের মতো দেখারও সুযোগ দেওয়া হয়নি তাঁকে। তাঁর কথায়, ‘‘পুলিশ এসে বলে, যদি সৎকার না করো, তাহলে দেহ নদীতে ভাসিয়ে দেব, অথবা মর্গে ফেরত পাঠিয়ে দেব।’’ এমনকী দাবি করেছেন, পুলিশই (Panskura) নাকি তড়িঘড়ি দাহক্রিয়া সম্পন্ন করে ফেলে।
গ্রামবাসীরাও প্রথমে প্রতিবাদে সামিল হলেও, পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠতেই পুলিশ লাঠিচার্জ করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় বলে অভিযোগ (Panskura)। শিশুটির দেহ নিয়ে সোজা অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ারের বাড়ির সামনে গিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেছিলেন স্থানীয়রা। সেই সময় পুলিশ আসে, লাঠি তোলে, এবং প্রতিবাদীদের ওপর বলপ্রয়োগ করা হয় বলে অভিযোগ।
কৃষ্ণেন্দুর মা আরও বলেন, ‘‘একটা সিভিক ভলান্টিয়ার হয়ে কীভাবে এত দাদাগিরি দেখাতে পারে? আমাদের সন্তানকে গালাগালি, অপমান করল, আর পুলিশ তার পাশে দাঁড়াল! যারা প্রতিবাদ করেছিল, তাদেরও একে একে গ্রেফতার করছে। তাহলে কে পাশে থাকবে?’’ এমন পরিস্থিতিতে তাঁরা থানায় অভিযোগ দায়ের করবেন বলেও জানান।
তবে পুলিশের দাবি, বিষয়টি ভিন্ন। তমলুকের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক আফজাল আবরার বলেন, ‘‘মৃতের মায়ের যেটা বক্তব্য, তা ঠিক সেভাবে বলা হয়নি। বিক্ষোভকারীরা যখন হিংসাত্মক আচরণ করছিল, তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে পুলিশ কেবলমাত্র বলেছিল, আপনারা সৎকার করুন, নয়তো আমাদের আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।’’
তবে প্রশ্ন উঠছে— একটি শিশুর মৃত্যু, তার দেহ নিয়ে মায়ের শেষ দেখা, আর একটি ‘সিভিক ভলান্টিয়ার’-এর ঔদ্ধত্য— সব মিলিয়ে যে যন্ত্রণা, তা কি আদৌ শুধুই ‘আইনশৃঙ্খলা’র ব্যাখ্যায় ঢাকা যায়?