শ্রাবণের দ্বিতীয় সোমবার স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে শিবের মাথায় জল ঢালতে গিয়েছিলেন শিক্ষক অলোকেশ ঘোষ (Panihati)। তবে সেই পুণ্যস্নান পরিণত হল এক মর্মান্তিক ট্র্যাজেডিতে। গঙ্গায় স্নান করতে নেমে ভাঁটার টানে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে তলিয়ে যান ওই শিক্ষক (Panihati)। স্ত্রীর প্রাণ কোনওভাবে রক্ষা পেলেও, এখনও নিখোঁজ রয়েছেন অলোকেশবাবু (Panihati)। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটির বারো মন্দির ঘাটে। এই ঘটনার পরেই স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে, কারণ বহুদিন ধরেই ঘাটের বেহাল দশা নিয়ে প্রশাসনকে অভিযোগ জানানো হলেও কোনো সংস্কারের কাজ হয়নি বলেই দাবি তাঁদের।
নিখোঁজ অলোকেশ ঘোষ (৩৮) পেশায় একজন স্কুলশিক্ষক। তিনি পানিহাটির (Panihati) মিলনগড় এলাকার বাসিন্দা এবং পানিহাটি রামকৃষ্ণ হাই স্কুলে রসায়নের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। জানা গিয়েছে, শ্রাবণের এই বিশেষ দিনে ভোরে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে বারো মন্দির ঘাটে গিয়েছিলেন তিনি। শিবের মাথায় জল ঢালার আগে গঙ্গায় স্নান করতে নামেন দু’জনে (Panihati)। কিন্তু তখনই ঘটে বিপত্তি। আচমকা ভাঁটার জলে সৃষ্ট প্রবল স্রোত আর ঘাটের গর্তে পড়ে তলিয়ে যান তাঁরা। উপস্থিত স্থানীয়রা বাঁশ ফেলে কোনওভাবে অলোকেশবাবুর স্ত্রীকে টেনে তুলতে সক্ষম হন। কিন্তু অলোকেশবাবুকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় খড়দহ থানার পুলিশ ও বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের উদ্ধারকারী দল। বহুক্ষণ ধরে তল্লাশি চালিয়েও সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁর কোনও খোঁজ মেলেনি। শিক্ষকের নিখোঁজ হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। একইসঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দারা বারো মন্দির ঘাটের বেহাল অবস্থার জন্য কর্তৃপক্ষকে কাঠগড়ায় তোলেন। তাঁদের অভিযোগ, ঘাটে দীর্ঘদিন ধরে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে, যা জল নামলেই মরণফাঁদে পরিণত হয়। প্রশাসনের একাংশ বিষয়টি জানলেও কেউ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ।
স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর ঝর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বহুদিন ধরেই বারো মন্দির ঘাটের অবস্থা অত্যন্ত করুণ। একাধিকবার দুর্ঘটনার কথা উঠে এসেছে। তবুও সংস্কারের কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। পানিহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান সোমনাথ দে অবশ্য দায় চাপিয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকারের উপর। তাঁর কথায়, “ঘাটগুলি কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের অধীনে। পুরসভা নিজের ইচ্ছামতো সংস্কারের কাজ করতে পারে না। আমরা বহুবার কেন্দ্রীয় সরকারের ‘নমামী গঙ্গে’ প্রকল্পে আবেদন করেছি। কিন্তু কেন্দ্র রাজ্যের মানুষকে উপেক্ষা করছে। সেই কারণেই আজ এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটল।”