ভিন রাজ্যে কাজ করতে গিয়ে মৃত্যু হল জলপাইগুড়ির এক পরিযায়ী শ্রমিকের (Migrant Worker)। তবে এই মৃত্যুকে ঘিরে রহস্য বাড়ছে। পরিবার থেকে শুরু করে স্থানীয় বাসিন্দা, এমনকি তৃণমূল বিধায়ক পর্যন্ত প্রশ্ন তুলেছেন— বাংলায় কথা বলাতেই কি প্রাণ গেল দীপু দাসের (Migrant Worker)? নাকি এটি নিছক দুর্ঘটনা নয়, পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড?
মৃত পরিযায়ী শ্রমিক (Migrant Worker) দীপু দাস জলপাইগুড়ি জেলার রাজগঞ্জ ব্লকের বিন্নাগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের গোকুল ভিটা গ্রামের বাসিন্দা। বহুদিন ধরেই তিনি ভিন রাজ্যে কাজ করতেন। সম্প্রতি পুনেতে এক ঠিকাদার সংস্থার অধীনে নির্মাণকাজে নিযুক্ত ছিলেন তিনি (Migrant Worker)।
সোমবার তাঁর মায়ের মৃত্যু হয়। সেই খবর জানানোর জন্য দীপুর ভাইরা একাধিকবার ফোন করেন তাঁকে। কিন্তু দীপুর ফোন বন্ধ থাকায় যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। এরপর তারা ঠিকাদার সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে অনুরোধ করেন দাদাকে মায়ের মৃত্যুসংবাদ জানাতে।
ঠিক তার পরদিন, অর্থাৎ মঙ্গলবার রাতে ঠিকাদার সংস্থার পক্ষ থেকেই ফোন আসে দীপুর পরিবারে (Migrant Worker)। জানানো হয়, দীপু দাস মারা গিয়েছেন। কিন্তু মৃত্যুর কারণ জানতে চাওয়া হলে সংস্থার তরফে নানা রকম অসংলগ্ন উত্তর দেওয়া হয়। কেউ বলেন, ছাদ থেকে পড়ে গেছে, আবার কেউ বলেন শরীর খারাপ। এতে সন্দেহ দানা বাঁধে পরিবারের মনে।
পরিবারের সদস্যরা জানাচ্ছেন, দীপুর (Migrant Worker) দেহের যে ছবি পাঠানো হয়েছে, তা দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন সকলে। দেহে একাধিক জায়গায় গুরুতর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। দীপুর ভাই অপু দাস বলছেন, “ছবিটা দেখে আমাদের পরিষ্কার সন্দেহ হয়েছে, ছাদ থেকে পড়ে দাদার মৃত্যু হয়নি। মারধর করে খুন করা হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। আমরা এই ঘটনার পূর্ণ তদন্ত চাই।”
অর্থনৈতিক দিক থেকে দুর্বল পরিবারটি এখন দিশেহারা (Migrant Worker) । দেহ পুনে থেকে ফিরিয়ে আনার সামর্থ্য তাঁদের নেই। ফলে সরকারি সহায়তার জন্য আবেদন করেছেন পরিবারের সদস্যরা।
স্থানীয় বাসিন্দা বাবলু রায় বলেন, “ছবিতে যা দেখা যাচ্ছে, তাতে এটা স্পষ্ট, মারধর করা হয়েছিল। দীপুকে খুন করা হয়েছে— এমনটাই সন্দেহ হচ্ছে।” দীপুর মা মারা যাওয়ায় পরিবার আগেই বিপর্যস্ত, এখন দীপুর দেহ আনতে কে যাবে, কীভাবে আনবে— তা নিয়েও উদ্বিগ্ন পরিবার।
বিন্নাগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সমিজুউদ্দিন আহমেদ আশ্বাস দিয়েছেন, অসহায় ওই পরিবারকে সমস্তরকম সাহায্যের ব্যবস্থা করা হবে। অন্যদিকে, রাজগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক খগেশ্বর রায় জানিয়েছেন, “আমি ইতিমধ্যেই শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তিনি বলেছেন লিখিত অভিযোগ দিতে হবে। এখন প্রশ্ন উঠছে, দীপুকে কি শুধুমাত্র বাংলায় কথা বলার জন্য মারধর করে খুন করা হল? এটা নিছক দুর্ঘটনা, না বাঙালি পরিচয়ের জেরে ঘটে যাওয়া ভয়ানক অপরাধ— তার পূর্ণ তদন্ত চাই।”
ঘটনার তদন্তে নামছে প্রশাসন। তবে এর পেছনে কোনও ভাষাগত বিদ্বেষ কাজ করেছে কিনা, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। বাংলার এক শ্রমিকের মৃত্যুর পেছনে কি লুকিয়ে রয়েছে এক বিভীষিকাময় সত্য?