ভিনরাজ্যে বাংলাভাষীদের উপর হেনস্থার অভিযোগে ফের সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। বুধবার ঝাড়গ্রামে ‘ভাষা আন্দোলন’-এর পদযাত্রা শেষে বিজেপিকে কড়া আক্রমণ শানালেন তিনি। তৃণমূল সুপ্রিমোর অভিযোগ—আজ বাংলা ভাষায় কথা বললেই কাউকে জেলে পাঠানো হচ্ছে, বাংলাদেশি বা রোহিঙ্গা তকমা দেওয়া হচ্ছে। তাঁর স্পষ্ট বার্তা, “যে-ই ফোন করুক, সবাই জয় বাংলা বলবেন।”
এদিন পুরাতন ঝাড়গ্রাম থেকে পাঁচমাথা মোড় পর্যন্ত পদযাত্রার নেতৃত্ব দেন মুখ্যমন্ত্রী (Mamata Banerjee)। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস-সহ একাধিক তৃণমূল নেতা। পদযাত্রা শেষে পথসভায় মঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রথমেই বামফ্রন্ট সরকারের সমালোচনা করেন মমতা। তিনি (Mamata Banerjee) বলেন, “একসময় ঝাড়গ্রামে মানুষ স্বাস্থ্য ফেরাতে আসতেন। কিন্তু বাম আমলে গোয়ালতোড়, বেলপাহাড়ি, ঝাড়গ্রামে মানুষের পা পড়ত না, ভয় পেত। আমি কিন্তু সেই সময়ও এসেছি। ক্ষমতায় আসার পর প্রথম লক্ষ্য ছিল ঝাড়গ্রামে শান্তি ফেরানো।” এরপর তৃণমূল সরকারের আমলে ঝাড়গ্রামের উন্নয়ন তুলে ধরেন তিনি।
এরপরই ভাষা-অপমান প্রসঙ্গে বিজেপিকে নিশানা করেন মুখ্যমন্ত্রী (Mamata Banerjee)। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “আজ বাংলা ভাষায় কথা বললেই জেলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশি বলা হচ্ছে। রোহিঙ্গা বলা হচ্ছে। রবীন্দ্রনাথ, স্বামী বিবেকানন্দ—বাংলার মনীষীরা কোন ভাষায় কথা বলতেন?” তিনি আরও বলেন, “আজ যদি স্বামীজি বেঁচে থাকতেন, বলতেন, এই দেশ আমি চাইনি। গায়ের জোরে ভয় দেখিয়ে যদি অত্যাচার করেন, তবে আমাদের দেহ পেরিয়ে যেতে হবে। আমরা পাহারাদারের মতো দাঁড়িয়ে থাকব।”
মমতা জানান, সময় এসেছে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের। তিনি বলেন, “আমরা বলব না আমাদের ভোট দিন, কিন্তু প্রতিবাদ না করলে অসমের মতো ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি হবে।” ভোটার তালিকার প্রসঙ্গে সতর্ক করে দেন মুখ্যমন্ত্রী—“নতুন করে নাম তুলতে হবে বলছে। মনে রাখবেন, অসমে লক্ষ লক্ষ নাম কেটে দেওয়া হয়েছিল। বিজেপি পার্টি লিস্ট তৈরি করবে? আপনার নিজের ঠিকানা আপনি ঠিক করুন। একটি নামও যেন বাদ না যায়।”
জনতার উদ্দেশে তাঁর শপথ—“রক্ত দেব, কলিজা দেব, কিন্তু বিনা যুদ্ধে এক ইঞ্চি জমি ছাড়ব না। এনআরসি বাংলায় করতে দিচ্ছি না, দেব না। অসম থেকে বাংলায় নোটিস পাঠাচ্ছে, সাহস তো কম নয়! নোটিস পেলে কেউ যাবেন না, গেলে জেলে পুরে দেবে। আমরা আইনজীবী দিয়ে লড়ব।”
শেষে বিজেপিকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “আমি যেদিন মনে করব, সেদিন আমাকে সরাতে পারবেন। যেদিন মনে করব না, সেদিন আপনার লোকেরাও আমাকে ভোট দেবে—কারণ তাঁদেরও আশ্রয় চাই, ঠিকানা চাই। এটা মনে রাখবেন।”