এই বছর বর্ষা রাজ্যে যেন জলের স্রোত বইয়ে দিয়েছে। একদিকে একটানা বর্ষণ, অন্যদিকে একের পর এক নিম্নচাপের দাপটে দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলা কার্যত জলের তলায়। নদীর জল বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে, রাস্তা-ঘাট ডুবে, বহু এলাকা প্লাবিত। এই বন্যা পরিস্থিতির জন্য সরাসরি দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন বা ডিভিসি-কে দায়ী করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)।
সোমবার বোলপুরের প্রশাসনিক সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী (Mamata Banerjee) স্পষ্ট অভিযোগ করেন, ডিভিসি পরিকল্পনা করেই জল ছেড়ে বাংলার একাধিক জেলা ডুবিয়ে দিচ্ছে। তিনি বলেন, “ঝাড়খণ্ডকে বাঁচাতে বাংলাকে ভাসিয়ে দিচ্ছে ডিভিসি। এটা আর চলতে দেওয়া যাবে না।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) অভিযোগ, গত ২০ বছর ধরে ডিভিসি কোনও রকম ড্রেজিং করেনি। ফলে জলাধারের জল ধারণ ক্ষমতা মারাত্মকভাবে কমে গিয়েছে। তাঁর কথায়, “যদি ঠিকমতো ড্রেজিং হত, তাহলে অতিরিক্ত চার লক্ষ কিউসেক জল ধরে রাখা যেত। সেই জলের চাপ পড়ে না বাংলার জেলার উপর।”
এখানেই শেষ নয়, মুখ্যমন্ত্রী (Mamata Banerjee) এবার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ডিভিসি যদি ভবিষ্যতে ড্রেজিং না করে, তাহলে তাদের বাঁধের সামনেই আরেকটি বাঁধ তৈরি করবে রাজ্য সরকার। উদ্দেশ্য একটাই— যাতে ডিভিসি যে জল ছাড়ছে, সেটা বাংলার দিকে না এসে তাদের মধ্যেই আটকে পড়ে। বললেন, “ওদের জলে এবার ওদেরই ভাসতে হবে। বাংলার জেলাগুলো ভাসবে না। এটাই আমাদের নতুন প্ল্যানিং। গায়ে আঘাত না লাগলে কেউ বোঝে না, এবার বুঝবে।”
ডিভিসি ও রাজ্য সরকারের মধ্যে এই জলবিভাজন নতুন নয়। বিগত কয়েক বছর ধরেই বর্ষাকালে জল ছাড়ার ইস্যুতে দু’পক্ষের মধ্যে তুমুল চাপানউতোর চলে আসছে। কখনও চিঠি, কখনও প্রকাশ্যে ক্ষোভ— মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, “রাজ্যকে না জানিয়েই হঠাৎ জল ছাড়ে ডিভিসি, আর তার জেরেই ডুবে যায় জেলা।”
এই অবস্থায় ডিভিসি-র বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীর এই প্রতিক্রিয়া ও পরিকল্পনা নিয়ে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, রাজ্য এবার সত্যিই নিজেদের সুরক্ষায় আলাদা উদ্যোগ নিতে চলেছে। তবে ডিভিসির বিরুদ্ধে এই রণহুংকার বর্ষার জলে কতটা বাস্তবায়ন সম্ভব, এখন সেটাই দেখার।