মর্গ ভরতি মৃতদেহ ( Malda Morgue)। সময়ের সঙ্গে জমেছে, জমে তৈরি হয়েছে স্তূপ। এক-দু’দিন নয়, অভিযোগ— মালদহ মেডিক্যাল কলেজে মাসের পর মাস ধরে পড়ে রয়েছে বেওয়ারিশ লাশ। যতদিন যাচ্ছে, ততই পচে নষ্ট হচ্ছে দেহগুলো। শহরের এক চিকিৎসাকেন্দ্রে এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে— মৃতদেহের কোনও দাবিদার নেই বলেই কি এমন অবহেলা ( Malda Morgue)? নাকি এর আড়ালে আরও ভয়ঙ্কর রহস্য? উঠছে অঙ্গ পাচারের আশঙ্কাও।
সপ্তাহখানেক আগে মর্গের ভিতরে ছিল প্রায় ৬০টি দেহ ( Malda Morgue)। স্থানীয় সূত্রে অভিযোগ, বহু দেহ সেখানে পড়ে ছিল দেড়-দুই বছর পর্যন্ত। যেগুলির সৎকারের দায়িত্ব বিবিগ্রাম দফন কফন কার্য সমিতির। সরকারি নিয়মে প্রতিটি দেহের জন্য তাদের দেওয়া হয় মাত্র ৭৪ টাকা। সমিতির দাবি, এই টাকায় একটিবারও বাঁশ কেনা যায় না, দেহ দাফনে খরচ হয় অন্তত পাঁচ হাজার টাকা ( Malda Morgue)। অভিযোগ, দীর্ঘদিন ফেলে রেখে দেহ পচে গেলে তখন সেগুলি হাতে দেওয়া হয়, অনেক সময় এমনও অবস্থায় যে বোঝা যায় না কোন অঙ্গ আছে আর কোনটা নেই। তখনই সন্দেহ— মর্গেপড়ে থাকা দেহগুলি থেকে অঙ্গ কোথাও পাচার হয় কি না?
সমিতির সম্পাদক হক জাফর ইমাম বললেন, “একেবারে পচাগলা শরীর দেওয়া হয়। আমাদের সময় নেই প্রতিটি দেহ ছিঁড়ে দেখা। অঙ্গ পাচারের সম্ভাবনা থাকতেই পারে।” তাঁর দাবি, “৭৪ টাকার সাহায্যে কোনও দেহের সৎকার করা সম্ভব নয়। আমাদের খরচ পড়ে পাঁচ-সাড়ে পাঁচ হাজার।”
এ সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন মর্গ ইন্সট্রাক্টর দীপঙ্কর ঝা ( Malda Morgue)। তাঁর বক্তব্য, “অঙ্গ কাজে লাগে না। যিনি বলছেন, তিনি ভুল বার্তা দিচ্ছেন।”
যদিও বাংলায় এর আগে বিভিন্ন মর্গে অঙ্গ পাচারের অভিযোগ উঠেছিল। আন্তর্জাতিক মহলেও আলোড়ন তুলেছিল হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের মর্গের প্রাক্তন ম্যানেজার সেড্রিক লজের ঘটনা— ২০২৩ সালে মৃতদেহ থেকে অঙ্গ চুরি করে অনলাইনে বিক্রির অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। বাংলাতেও বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ এবং আরজি কর হাসপাতাল থেকে মৃতদেহ পাচারের মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন একাধিক ব্যক্তি। সেই দৃষ্টান্ত তুলে আশঙ্কা আরও বাড়াচ্ছেন অভিযোগকারীরা।
রাজনৈতিক মহলও সরব। বিজেপির মালদহ দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অজয় গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “গোটা বাংলায় মৃতদেহের অঙ্গ বিক্রি হয়। আন্তর্জাতিক চক্র রয়েছে। বিভিন্ন জেলা থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত পাচার হয়।”
কংগ্রেসের প্রাক্তন বিধায়ক মুস্তাক আলম বলেন, “মর্গে কী ভাবে মাসের পর মাস দেহ পড়ে থাকবে? ৭৪ টাকা দিয়ে সৎকার সম্ভব নয়। এর পেছনে কি অন্য উদ্দেশ্য আছে? প্রশাসনকে বলতে হবে।” তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, “দেড়-দুই বছর দেহ পড়ে থাকা কীভাবে সম্ভব?”
অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল শিবির। মালদহ জেলা পরিষদের সহ-সভাপতি এটিএম রফিকুল হোসেন জানান, “এক-দু’টি দেহ দেরিতে দেওয়ার অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সমব্যথী প্রকল্পের ২০০০ টাকার সুবিধা এখানে দেওয়া যায় কি না, তাও ভাবছি।”
মর্গে পচা দেহের দুর্গন্ধ, প্রশাসনের নীরবতা, রাজনৈতিক চাপানউতোর— তিনেই উত্তপ্ত মালদহ। প্রশ্ন একই— বেওয়ারিশ বলেই কি মৃতদেহের প্রতি এত নিষ্ঠুর উদাসীনতা? নাকি সত্যিই কোনও অন্ধকার ব্যবসার ছায়া রয়েছে হাসপাতালের দেয়ালের আড়ালে? সময়ই দেবে উত্তর।











