নেশাজাত দ্রব্য নির্মূল করতে গিয়ে সোমবার কার্যত উত্তেজনার কেন্দ্রে আবগারি দফতরের কর্মীরা। জলপাইগুড়ির মালবাজারের (Malbazar) মিনগ্লাস চা বাগানের ভাদাইলাইন এলাকায় অভিযান চালাতে গিয়ে হামলার মুখে পড়েন তাঁরা। ঘটনায় এক মহিলা আবগারি কর্মীর হাত ভেঙে যায় বলে অভিযোগ উঠেছে (Malbazar)। আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন অফিসার।
আবগারি দফতরের কর্মীরা এদিন স্থানীয়ভাবে তৈরি হাঁড়িয়া ও চোলাই মদের খোঁজে অভিযানে বেরিয়ে পড়েন (Malbazar)। তাঁরা গোপন সূত্রে খবর পেয়ে ভাদাইলাইন এলাকার একাধিক বাড়িতে হানা দেন (Malbazar)। সেই সময়ই চা বাগানের স্থানীয় কিছু মানুষ প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন। কিছুক্ষণের মধ্যে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। অভিযোগ, একদল লোক আবগারি অফিসারদের ঘিরে ধরে মারধর শুরু করে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়ানক হয় যে, এক মহিলা কর্মীর হাত ভেঙে দেওয়া হয়। আহতদের দ্রুত মালবাজার সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
অভিযানের সময় যে বাড়ি থেকে হাঁড়িয়া তৈরির সামগ্রী উদ্ধার হয়, সেই বাড়ির পক্ষ থেকেও পালটা অভিযোগ এসেছে। তাঁদের অভিযোগ, আবগারি দফতরের কর্মীরা এক বৃদ্ধা মহিলাকে চুলের মুঠি ধরে টেনে নিয়ে যান এবং মারধর করেন। সেই বৃদ্ধাকেও হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।
এই ঘটনা জানাজানি হতেই হাসপাতালের বাইরে জড়ো হন মিনগ্লাস চা বাগানের বহু মানুষ। তাঁরা আবগারি দফতরের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য, “পুলিশ বা প্রশাসন তাদের কাজ করুক, আমরা কিছু বলছি না। কিন্তু হাঁড়িয়া তো আমাদের সংস্কৃতির অংশ। পূর্বপুরুষদের সময় থেকেই আমরা এটি বানিয়ে খাই। এটা অপরাধ হতে পারে না।” কেউ কেউ সরাসরি অভিযোগ করেন, “যে বৃদ্ধাকে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তাঁর বয়স ৭০ পেরিয়েছে। এত বড় অপমান আগে কোনওদিন দেখিনি।”
আবগারি দফতরের তরফে বলা হয়েছে, তাঁদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়েছে। তাঁরা সরকারি নির্দেশ মেনেই অবৈধ মদ তৈরির বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছিলেন। স্থানীয়রা প্রতিবাদ করতে গিয়ে তাঁদের শারীরিকভাবে আক্রমণ করে।
উত্তেজনা এতটাই চরমে পৌঁছায় যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল চত্বরে মোতায়েন করা হয় বিশাল পুলিশ বাহিনী। স্থানীয় প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। দু’পক্ষের বক্তব্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রশ্ন উঠছে— যেখানে একদিকে সরকার নেশা বিরোধী অভিযান চালাচ্ছে, অন্যদিকে সেখানে কি সংস্কৃতির নামে মদ তৈরিকে প্রশ্রয় দেওয়া উচিত? আবার প্রশাসনের পক্ষ থেকেও প্রশ্ন উঠছে, কোনও তদন্ত বা অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে স্থানীয় মানুষের সঙ্গে আরও সংবেদনশীলতা দেখানো উচিত কি না।
ঘটনার পর মিনগ্লাস চা বাগানে চরম উত্তেজনা বজায় রয়েছে। পরিস্থিতি সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে আনতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশের যৌথ উদ্যোগ চলছে। তবে এই ঘটনার রেশ আগামী দিনে রাজ্য জুড়েই নতুন বিতর্কের জন্ম দিতে পারে।