১০ কোটিরও বেশি টাকার জাল ও খেলনা নোট (Fraud) উদ্ধারে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালিতে। এই বিপুল পরিমাণ নোট উদ্ধার হওয়ার পরই পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে এক ভয়ঙ্কর সাইবার জালিয়াতির চক্রের ছক। শুধু প্রতারণা নয়, অভিনব কায়দায় সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচয় ঘটিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল চক্রটি (Fraud)। মূল অভিযুক্ত অভিষেক তিওয়ারি এখনও পলাতক। গ্রেফতার হয়েছে তাঁর বান্ধবী তিস্তা সেন-সহ আরও কয়েকজন।
সূত্রের খবর, এই চক্রের অন্যতম মাথা তিস্তা সেন ভিডিও কলে সুটকেসভর্তি টাকা দেখিয়ে ব্যবসায়ীদের ৫০ কোটি পর্যন্ত ঋণ দেওয়ার প্রলোভন দেখাতেন (Fraud)। ভিডিও কলেই থরে থরে সাজানো কোটির পর কোটি টাকা দেখে অবাক হতেন বহু মানুষ (Fraud)। সেই লোভেই ফাঁদে পা দিতেন প্রোমোটার থেকে ছোট-বড় ব্যবসায়ীরা।
এই প্রলোভনের মোড়কে সবচেয়ে বড় শিকার হয়েছেন বার্নপুরের এক প্রোমোটার (Fraud)। ৩০ কোটি টাকা ঋণ পাওয়ার আশায় ‘প্রসেসিং ফি’ হিসেবে তিনি দিয়ে দেন ২২ লক্ষ টাকা। তারপর? আর কোনও উত্তর নেই। বন্ধ হয়ে যায় যোগাযোগ।
এই প্রতারণার পুরো ছক তৈরিই হয়েছিল ‘ভিজুয়াল প্রমাণ’ দেখানোর জন্য। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, জাল নোট নয়, মূলত খেলনা নোটই ছাপানো হয়েছিল সুটকেসভর্তি টাকা দেখানোর জন্য। যাতে ভিডিও কলে দেখালে মনে হয়, সত্যিই কোটি কোটি টাকা আছে তাদের হাতে। এই খেলনা নোট ছাপানো হয় দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলায়। সেখান থেকে গ্রেপ্তার করা হয় দেবত্তোম চক্রবর্তী নামে এক ব্যক্তিকে, যিনি স্বীকার করেন যে তিনি শুধু মিডলম্যানের ভূমিকা পালন করেছিলেন।
নোট ছাপাতে ব্যবহৃত হয়েছিল শিয়ালদহের একটি ছাপাখানা। অভিযোগ, ছাপাখানার মালিককে বলা হয়েছিল, সিনেমার শুটিংয়ের জন্য এই নোট প্রয়োজন। কিন্তু পরে এই নোটগুলি অভিষেক তিওয়ারির হাতে তুলে দেওয়া হয়, এবং শুরু হয় প্রতারণার নতুন অধ্যায়।
সিআইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, উদ্ধার হওয়া নোটের মধ্যে মাত্র ৫২ হাজার টাকা আসল, প্রায় ৪০ হাজার টাকা জাল এবং বাকি প্রায় ৮ কোটি টাকার বেশি শুধুই খেলনা নোট! তদন্তকারীরা নিশ্চিত, এর পেছনে অভিষেক তিওয়ারি ও তিস্তা সেনের বহু পুরনো প্রতারণার ছক রয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, এই যুগল এর আগেও একই ধরনের জালিয়াতির অভিযোগে কলকাতা পুলিশের সাইবার থানার হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিল। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পরই তারা ফের সক্রিয় হয়।
তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় বন্ধুত্ব করে দাবি করত, ৪ শতাংশ সুদে কোটি কোটি টাকা ঋণ দেবে। ভিডিও কলে টাকা দেখিয়ে বিশ্বাস তৈরি করে, আর তারপর ‘প্রসেসিং ফি’ বা গ্যারান্টি ফি নিয়ে চুপচাপ গা-ঢাকা দিত। পুলিশের দাবি, কয়েকটি নির্দিষ্ট ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো হত এবং তারপরই প্রতারকদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ রাখা যেত না।
এখন এই ভয়াবহ প্রতারণা চক্রের মূল মাথা অভিষেক তিওয়ারির খোঁজে সারা রাজ্যে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। সিআইডি জানিয়েছে, অভিযুক্তদের জেরা করে আরও বহু তথ্য হাতে আসছে। চক্রটি কোথা থেকে পরিচালিত হত, কারা আরও যুক্ত রয়েছে এবং কীভাবে এত সহজে কোটি কোটি টাকার প্রতারণা করে চলছিল, তা জানার চেষ্টা চলছে।