দেশজুড়ে বেআইনি ওষুধ কারবার রীতিমতো মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কাছে। বিশেষ করে ভয়াবহ রোগ ক্যানসারের জাল ওষুধ (Fake cancer medicine) ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা সাধারণ মানুষের উদ্বেগ বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এই জালিয়াতির পিছনে যে চক্র সক্রিয়, তাদের অন্যতম মাথা সাবির আলম—যে কিনা দীর্ঘদিন ধরে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল। অবশেষে দিল্লি পুলিশের অপরাধ দমন শাখা পশ্চিম বর্ধমানের রানীগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করল তাকে (Fake cancer medicine)।
তিন বছর আগে, ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে ক্যানসারের জাল ওষুধ (Fake cancer medicine) ছড়ানোর ঘটনা প্রথমবার প্রকাশ্যে আসে। এই নকল ওষুধে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়েছিল বহু রোগীকে। দিল্লি পুলিশের তদন্তে জানা যায়, দেশের একাধিক রাজ্যে নকল ক্যানসার ওষুধ সরবরাহ করছিল একটি সংগঠিত চক্র। ওই চক্রেরই প্রধান কারিগর ছিলেন সাবির আলম, যার বাড়ি পশ্চিম বর্ধমানের খণ্ডঘোষ থানার অন্তর্গত কুমিরখোলা এলাকায়।
প্রথমে ক্যাব চালক হিসেবে কাজ শুরু করলেও ২০২২ সালে এক চিকিৎসকের সূত্র ধরে সাবির এই চক্রে (Fake cancer medicine) প্রবেশ করে। সেখান থেকে দ্রুতই চক্রের মূল ‘লজিস্টিক হাব’ হয়ে ওঠে সে। চিকিৎসকদের একাংশের সহায়তায় পশ্চিমবঙ্গ, দিল্লি, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ ও এমনকি বাংলাদেশেও এই জাল ওষুধের রমরমা শুরু হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, হরিয়ানার সোনিপতে একটি গোপন কারখানায় তৈরি হত নকল ওষুধ। সেই ওষুধ ভারতের একাধিক রাজ্যে পাচার হত। তদন্তে উঠে এসেছে, উত্তরপ্রদেশের একটি গুদাম থেকেও বিপুল পরিমাণ ক্যানসারের নকল ওষুধ উদ্ধার করা হয়েছে। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই ১৪ জনকে গ্রেফতার করেছে দিল্লি পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে রয়েছেন দু’জন চিকিৎসকও।
দিল্লি পুলিশের অপরাধ দমন শাখা ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায়— 274, 275, 276, 420, 468, 471, 308, 201, 34 এবং 120B ধারায় মামলা দায়ের করে এই চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর তদন্ত শুরু করে। সাবিরের খোঁজে হুলিয়া জারি হয়, তবে সে বারবার নিজের অবস্থান বদলে পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছিল।
সম্প্রতি তদন্তকারীরা জানতে পারেন, সাবির রানীগঞ্জের কেন্দা এলাকায় আত্মগোপন করে রয়েছে। সেই খবরের ভিত্তিতে দিল্লি পুলিশের একটি দল পশ্চিম বর্ধমানে অভিযান চালিয়ে অবশেষে গ্রেফতার করে তাকে। তদন্তকারীরা মনে করছেন, সাবিরকে গ্রেফতারের পর এই মারণ চক্রের বহু গোপন দিক সামনে আসতে চলেছে। এখন পুলিশ খতিয়ে দেখছে, এর পিছনে আর কারা রয়েছে, কতজন চিকিৎসক এই অসৎ কারবারে যুক্ত, এবং আরও কোন কোন রাজ্যে এই নকল ওষুধ সরবরাহ হয়েছে।
জাল ওষুধ কাণ্ডে সাবিরের গ্রেফতারকে বড় সাফল্য হিসেবে দেখছে দিল্লি পুলিশ। তবে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে— মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করে যাঁরা কোটি কোটি টাকা কামাচ্ছেন, তাঁরা ঠিক কতটা গভীরে শেকড় গেড়ে বসে রয়েছেন? এক সাবির ধরা পড়লেও, আর কত ‘সাবির’ এখনও অদৃশ্য?