শুধুই কি পারিবারিক খুশি (BSF Jawan)? নাকি এই ঘটনায় উঁকি দিচ্ছে ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তা (BSF Jawan)? ব্যবস্থার বড়সড় ফাঁকফোকর এবং রাজনৈতিক চাপানউতোরের নগ্ন বাস্তব?
পূর্ব মেদিনীপুরের ছেলে পূর্ণম সাউ (BSF Jawan) সীমান্তে টহল দেওয়ার সময় ভুল করে ঢুকে পড়েন পাকিস্তানের মাটিতে। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে আটক করে পাক রেঞ্জার্স। এরপর শুরু হয় ভারতের তরফে কূটনৈতিক তৎপরতা। একাধিকবার ফ্ল্যাগ মিটিং হলেও পাকিস্তান নিজের অবস্থান থেকে একচুলও না সরে স্পষ্ট জানায়—পূর্ণমকে (BSF Jawan) মুক্তি দেওয়া হবে না।
এই ঘটনার জেরে চরম উদ্বেগ ছড়ায় সারা দেশজুড়ে। প্রশ্ন ওঠে—এটা কী নিছক এক ‘টহলের ভুল’? নাকি ভারতের সীমান্ত টহল এবং আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়ার ব্যর্থতার ছবি? কেন বারবার মিটিং করেও ফিরিয়ে আনা যায়নি এক সাধারণ বিএসএফ জওয়ানকে? কেন এতদিন তাকে আটকে রাখা হল, আন্তর্জাতিক নিয়মকে তোয়াক্কা না করেই?
পূর্ণমের স্ত্রী রজনী সাউ তখনই রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানান স্বামীর মুক্তির জন্য। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি যোগাযোগ করেন তাঁর সঙ্গে, বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে যে উচ্চপর্যায়ে তৎপরতা চালানো হয়েছে, তা পরবর্তীতে পরিষ্কার হয় পূর্ণমের মুক্তির প্রক্রিয়ায়।
১৪ মে শেষ পর্যন্ত আটারি-ওয়াগা সীমান্ত দিয়ে পূর্ণমকে ফেরত পাঠায় পাকিস্তান। যদিও সঙ্গে সঙ্গে বাড়ি ফিরতে পারেননি তিনি। সেনাবাহিনীর তরফে তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা সহ বিভিন্ন পর্যায়ের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। অবশেষে এক মাস পরে আজ, ২৩ মে, ফিরে আসছেন নিজের শহর রিষড়ায়।
স্ত্রী রজনীর চোখে জল, তবু মুখে হাসি—“বাড়ি ফিরছে আমার রাম! ফোনে কথা বলতে পারিনি এতদিন, আজ তাই লুচি-তরকারি আর দই-মিষ্টি দিয়ে স্বাগত জানাবো।” এলাকায় আনন্দ মিছিলের আয়োজন করেছে পুরসভা। কেক কাটা হবে বিকেলে। উপস্থিত থাকবেন চেয়ারম্যান থেকে স্থানীয় নেতানেত্রী।
তবে এই খুশির আবহের মধ্যেই থেকে যাচ্ছে প্রশ্ন—একজন ভারতীয় সেনা কেন এক মাস ধরে শত্রু দেশের হাতে বন্দি থাকলেন? সরকার কি আরও দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পারত না? পাকিস্তান কি ইচ্ছাকৃতভাবে সময় নিল? এ সব প্রশ্ন এখন জনমনে আলোড়ন তুলছে, উত্তরের অপেক্ষায় গোটা দেশ।
এ ঘটনায় কেন্দ্রীয় সরকারকে ধন্যবাদ জানালেও, অনেকেই মনে করছেন—এই ঘটনা ভারতের কূটনৈতিক অবস্থানের দুর্বলতাও স্পষ্ট করে দিয়েছে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন—পূর্ণমকে ঘিরে শুরু হয়ে গিয়েছে মোদী বনাম মমতার ‘ক্রেডিট পাওয়ার’ লড়াইও।
বাংলাদেশ বা পাকিস্তান নয়, এ বার নিজেদের ঘরের প্রশ্ন—দেশের জওয়ানদের সুরক্ষায় ভারত কতটা প্রস্তুত?