নদিয়ার কৃষ্ণনগরে আবারও এক বিএলও-র আত্মহত্যা ঘিরে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। ষষ্ঠীতলার বাসিন্দা এবং পেশায় পার্শ্বশিক্ষক রিঙ্কু তরফদার (Nadia), বয়স ৫১, নিজের ঘরেই গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হন। তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হওয়ার পর পরিবারের সামনে আসে একটি সুইসাইড নোট, যেখানে তিনি স্পষ্ট ভাষায় লিখে গিয়েছেন, বিএলও-র অতিরিক্ত কাজের চাপ তিনি আর সামলাতে পারছিলেন না (Nadia)। সেই প্রশাসনিক চাপই তাঁর পক্ষে সহ্য করা অসম্ভব হয়ে উঠেছিল। সুইসাইড নোটে রিঙ্কু নির্বাচন কমিশনকেও তাঁর মৃত্যুর জন্য দায়ী করেছেন, যা ঘিরে নতুন করে বিতর্ক ও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
রিঙ্কু তরফদার বাঙালঝি এলাকার স্বামী বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দিরে পার্শ্বশিক্ষক হিসেবে কাজ করতেন (Nadia)। স্কুলের কাজের পাশাপাশি তাঁকে এলাকার বিএলও-র দায়িত্বও দেওয়া হয়েছিল। পরিবারের দাবি, রিঙ্কু অনলাইনে খুব পারদর্শী ছিলেন না। তাই এসআইআর সংক্রান্ত কাজ নিয়ে তিনি দীর্ঘদিন ধরেই চাপে ছিলেন। সেই চাপ এতটাই বাড়তে থাকে যে মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে শুরু করেন তিনি। সুইসাইড নোটে তিনি লিখে গিয়েছেন, কাজ তুলতে না পারলে প্রশাসনিক চাপ বাড়বে, আর সেই চাপ তিনি আর সহ্য করতে পারছেন না (Nadia)।
সুইসাইড নোটে মেয়েদের উদ্দেশে তিনি আবেগভরা ভাষায় লিখেছেন, বাবার খেয়াল রাখার কথা। জানিয়েছেন, তাঁর পরিবারের কেউ তাঁর মৃত্যুর জন্য দায়ী নয়, বরং তাঁরা সর্বদা তাঁর পাশে থেকেছে। তিনি বলেন, তাঁর সংসারে কোনও অভাব ছিল না, তিনি বাঁচতে চাইতেন। কিন্তু বিএলও-র কাজের যে অমানুষিক চাপ তাঁর কাঁধে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তা তিনি আর নিতে পারছিলেন না। তাই বাধ্য হয়েই ওই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
রিঙ্কুর পরিবার ও স্থানীয়রা দাবি করছেন, সরকারের নির্দেশ ও নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বের বোঝা একসঙ্গে বহন করতে গিয়ে বহু পার্শ্বশিক্ষকই আজ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছেন। এর আগেও জলপাইগুড়ির মালবাজারে এক মহিলা বিএলও-র আত্মহত্যার ঘটনা সামনে এসেছিল, সেখানেও কাজের চাপকে দায়ী করা হয়েছিল। সেই ঘটনার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরব হয়ে নির্বাচন কমিশনকে এসআইআর প্রক্রিয়া বন্ধ করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। তার মাত্র কয়েক দিন পরই ফের নদিয়ায় এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘিরে প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি বিএলও-দের নিরাপত্তা ও মানসিক চাপের বিষয়টি এখনও সমাধান হয়নি?
এই নতুন আত্মহত্যার ঘটনায় গোটা কৃষ্ণনগর শোকস্তব্ধ। রাজনৈতিক মহলেও শুরু হয়েছে তীব্র দোলাচল। রিঙ্কুর মৃত্যুর পর তাঁর বাড়িতে ভিড় জমছে প্রতিবেশী ও পরিচিতদের। বারবারই উঠে আসছে একটাই প্রশ্ন—বিএলও-দের উপর কি সত্যিই মাত্রাতিরিক্ত চাপ তৈরি করছে নির্বাচন কমিশন? আর সেই চাপই কি প্রাণ কাড়ছে সাধারণ শিক্ষকদের?
এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। নির্বাচন কমিশনকেও নতুন করে প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। রিঙ্কুর শেষ চিঠি এখন জেলায় নতুন বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু।













