এক কাপড়ে, বুকভরা আতঙ্ক নিয়ে হরিয়ানা ছাড়লেন বাংলাভাষী শ্রমিকরা (Migrant Workers)। অঘোষিত হুমকির জেরে রাতারাতি ভিটেমাটি ছেড়ে ধানকোটের সেক্টর ১০২ থেকে কোচবিহারে ফিরলেন ১০৩ জন। ভাড়ার বাসে ঠাসাঠাসি করে, রাস্তায় রাত্রিযাপন করে, চোখেমুখে ভয়ের ছাপ নিয়েই ঘরে ফিরেছেন তাঁরা (Migrant Workers)। ভাড়া দিতে গিয়ে পরিবারগুলোর অবস্থা এখন রীতিমতো করুণ—দুই লাখেরও বেশি টাকা একসঙ্গে জোগাড় করতে গিয়ে নাকের জলে চোখের জলে দিন কাটছে।
তুফানগঞ্জের ধাদিয়াল গ্রামের মফিজুল হক (Migrant Workers) জানালেন, তিনি এবং তাঁর আত্মীয়-পরিজন মিলে প্রায় ছয় বছর ধরে হরিয়ানার ওই এলাকায় দিনমজুরি, গাড়ি ধোয়া, গৃহপরিচারিকার কাজ করে সংসার চালাচ্ছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বাংলায় কথা বললেই বেছে বেছে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। রাতে চোখ বেঁধে মারধর, মুক্তিপণের দাবিও উঠছে।
এর মধ্যেই হঠাৎ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে ভয়াবহ গুজব—“৭ আগস্টের পর কোনও বাঙালি ধানকোটে থাকতে পারবে না!” এই ঘোষণাই যেন মৃত্যুদণ্ডের সমান হয়ে দাঁড়ায় ওখানে থাকা বাঙালিদের জন্য (Migrant Workers)। কে কখন উঠিয়ে নিয়ে যাবে, কেউ জানে না। আতঙ্ক এতটাই তীব্র হয়ে ওঠে যে, ১০৩ জন শ্রমিক মিলে একটা বাস ভাড়া করে তড়িঘড়ি হরিয়ানা ছাড়েন। ভাড়ার পরিমাণ আড়াই লক্ষ টাকা! এই বিপুল খরচ বহন করতে গিয়ে তাঁদের অনেকেরই শেষ সঞ্চয়টুকুও শেষ হয়ে গিয়েছে।
এই ঘটনার প্রতিধ্বনি শোনা গেল হরিয়ানা ফেরত মহম্মদ সুমন শেখের কণ্ঠেও। তিনি বলেন, “আমরা ওখানে টিনের চালা তুলে কোনওভাবে বাস করছিলাম। কৃষিজমি নেই, নিজের রাজ্যে কাজ নেই, তাই বাইরে গিয়েছিলাম একটু রোজগারের আশায়। কিন্তু হরিয়ানার বিজেপি সরকার আমাদের জন্য এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছে, যে থেকে গেলে হয়তো মার খেয়ে হাসপাতালে পড়ে থাকতে হত।”
তুফানগঞ্জ ছাড়াও কোচবিহারের আরও কিছু গ্রামের বাসিন্দারাও এই বাসে ফিরেছেন। প্রত্যেকের চোখে-মুখে এখনও আতঙ্ক স্পষ্ট। কেউই ভবিষ্যতে আর রাজ্যের বাইরে কাজে যেতে চান না।
এই ঘটনায় এখন প্রশ্ন উঠছে—বাংলায় কথা বললেই কি নির্যাতন হবে? সরকারের ভূমিকা কোথায়? বাংলা ভাষাভাষীদের উপর এই নিপীড়নের শেষ কোথায়?