দুর্গাপুজোর ঠিক আগে ভিনরাজ্যে ঢাক বাজাতে বেরোচ্ছেন বাঁকুড়ার ওন্দার থানার নতুন গ্রামের প্রায় ২২ জন ঢাকি (Dhaki)। তবে হাতে বরাত থাকলেও তাঁদের চোখে-মুখে ভরপুর দুশ্চিন্তা। কারণ, আগের বছরগুলিতে শোনা গিয়েছে বাংলার শ্রমিকদের ভিনরাজ্যে হেনস্তার ঘটনা। তাই এবার ছত্তিশগড়ের উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে তাঁরা নিজেদের আধার কার্ড, ফোন নম্বর, ঠিকানা পুলিশের হাতে জমা দিয়েছেন (Dhaki)। সঙ্গে স্ত্রী-সন্তানেরা গুছিয়ে দিয়েছেন জামাকাপড়, খাবার আর জরুরি নথি। তবুও আতঙ্ক কাটছে না কারও মনে।
প্রশান্ত, মঙ্গল, বৈদ্ধিনাথ, অচিন্ত্য কালিন্দীদের মতো ঢাকিরা (Dhaki) বিগত চার বছর ধরে উপার্জনের জন্য ভিনরাজ্যে যান। এবছরও তাঁদের বরাত এসেছে ছত্তিশগড় থেকে। ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত ১০ থেকে ১২টি পুজো মণ্ডপে ভাগ হয়ে ঢাক বাজাবেন তাঁরা। খড়গপুর থেকে ট্রেনে রওনা দেবেন, ভাড়া পড়বে জনপ্রতি দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। পুজো উদ্যোক্তারা স্টেশন থেকে গাড়ি করে নিয়ে যাবেন এবং থাকার-খাওয়ার ব্যবস্থা করবেন। দশমীর শেষে প্রত্যেক ঢাকি গড়ে প্রায় ১৭ হাজার টাকা উপার্জন করবেন বলে আশা।
তবুও অচিন্ত্য কালিন্দীর ভয় কাটছে না। তিনি বলেন, “আমরা প্রত্যন্ত গ্রামে থাকি। বাংলা ছাড়া আর কোনও ভাষা জানি না। তাই ছত্তিশগড়ের কমিটিগুলির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি, যাতে কোনও ঝামেলায় না পড়তে হয়। যদি পুলিশের কাছ থেকে লিখিত কোনও অনুমতি বা নথি পাই, তবে সেটা সঙ্গে নিয়ে যাব।”
অচিন্ত্যের স্ত্রী চুমকি এবং মঙ্গলের স্ত্রী ময়না বলেন, “পুজোর সময় স্বামীরা বাইরে গিয়ে ঢাক বাজালে বাড়তি আয় হয়। সেই টাকায় ছেলেমেয়েদের জামাকাপড় কেনা যায়, সংসারও কয়েক মাস ভালভাবে চলে। কিন্তু যদি কোনও বিপদ হয়, সেই চিন্তায় দিন কাটছে।”
ভারতীয় ডোম সমাজ বিকাশ পরিষদের বাঁকুড়া জেলা কমিটির যুব সম্পাদক জিৎ কালিন্দী জানান, শুধু বাঁকুড়া থেকেই নয়, মুম্বই, নাগপুর, কানপুর, হরিয়ানা-সহ বিভিন্ন রাজ্যে ডোম সম্প্রদায়ের শত শত মানুষ ঢাক বাজাতে গিয়েছেন। এবছরও ৩০০ জনের বেশি ঢাকির নাম, আধার কার্ড, মোবাইল নম্বর জেলা পুলিশের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ আশ্বাস দিয়েছে, কোনও সমস্যায় পড়লে সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ করতে।